Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর, ভারতের জাতীয় চেতনার যাত্রা

বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর, ভারতের জাতীয় চেতনার যাত্রা

বন্দে মাতরম, Bande Mataram, 150 years, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, Indian independence movement, national song of India, Rabindranath Tagore, Swadeshi movement, Indian nationalism, Vande Mataram celebration, 2025 Parliament discussion


১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কলমে জন্ম নেওয়া বন্দে মাতরম আজ ১৫০ বছর পূর্ণ করেছে। এটি কেবল একটি গান নয়, বরং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণশক্তি, মাতৃভূমির প্রতি অটল নিষ্ঠার প্রতীক এবং জাতীয় ঐক্যের মন্ত্র। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক যাত্রার স্মরণে আলোচনা শুরু হলো।

প্রথমে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত এই গানটি ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দমঠ-এ অন্তর্ভুক্ত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সঙ্গীতায়োজন করেন এবং ১৮৯৬ সালের কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনে এটি প্রথম প্রকাশ্যে গাওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে মানুষ যখন রাস্তায় নেমে আসে, তখন এই গানটি রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয়।

আনন্দমঠ উপন্যাসে সন্ন্যাসীরা মাতৃভূমির সেবাকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেন। ভারতমাতার তিনটি রূপ—অতীতের গৌরবময় মা, বর্তমানের দুঃখী মা এবং ভবিষ্যতের পুনরুত্থিত মা—জাতীয় চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে। অরবিন্দ এই মাকে ভিক্ষার পাত্র নয়, বরং কোটি কোটি হাতে তরবারিধারী শক্তির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ। তাঁর দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা এবং দেবী চৌধুরাণী সমাজে আত্মসম্মান ও দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। আর বন্দে মাতরম আধুনিক ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আদর্শিক ভিত্তি স্থাপন করে।

স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই গানটি বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। ভিখাইজি কামার উত্তোলিত প্রথম তেরঙ্গায় “বন্দে মাতরম” খোদাই করা ছিল। মদনলাল ধিংরার মৃত্যুর আগে শেষ কথা ছিল “বন্দে মাতরম”। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রাও এটিকে স্বাধীনতার বার্তা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার গানটি নিষিদ্ধ করলেও শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার ও শাস্তির ভয় উপেক্ষা করে এটি গাইতে থাকে।

১৯৫০ সালে গণপরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে বন্দে মাতরমকে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে এর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে এবং এটি জন গণ মন-এর মতোই সম্মান পাবে।

এই বছর কেন্দ্রীয় সরকার দেশজুড়ে বন্দেমাতরমের ১৫০তম বর্ষ উদযাপন করছে। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে জাতীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে, জেলা ও তহসিল পর্যায়ে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। প্রকাশিত হবে ডাকটিকিট, স্মারক মুদ্রা এবং প্রদর্শনী। অল ইন্ডিয়া রেডিও ও দূরদর্শনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে। বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গীত উৎসব এবং বৃক্ষরোপণ অভিযান হবে। “বন্দে মাতরম: মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা” থিমে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ ও ম্যুরাল প্রচারণা শুরু হবে।

আজও, ১৫০ বছর পরেও, বন্দে মাতরম প্রতিটি ভারতীয়ের হৃদয়ে অনুরণিত হয়। এটি কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। গানটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভারতের শক্তি তার ঐক্য, সংস্কৃতি এবং মাতৃভূমির প্রতি অটল ভালোবাসায় নিহিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code