দিল্লীতে বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই হরিয়ানায় উদ্ধার ২৯১০ কেজি বিস্ফোরক ! আরও বড় নাশকতার ছক !
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে ঘটে গেল এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে পার্ক করা একটি গাড়িতে হঠাৎই ঘটে এই বিস্ফোরণ, যার তীব্রতা এতটাই ছিল যে আশেপাশের ছয়টি গাড়ি, দুটি ই-রিকশা এবং একটি অটোরিকশা মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিট নাগাদ যখন এলাকাটি ছিল লোকে লোকারণ্য, তখনই এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ ছুটোছুটি শুরু করে। বিস্ফোরণে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহতদের দ্রুত এলএনজেপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ এলাকা ঘিরে ফেলে এবং ফরেনসিক দল, এনএসজি ও এনআইএ-র সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। দিল্লি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি)-র পরিচালকের সঙ্গেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এনএসজি, এনআইএ এবং ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
এই বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগেই হরিয়ানার ফরিদাবাদে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ২৯১০ কেজি বিস্ফোরক, যার মধ্যে ছিল বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে একটি AK Krinkov রাইফেল, পিস্তল, ম্যাগাজিন, ড্রোন, জ্যামার, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম। ফরিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ড. মুজাম্মিল শাকিল নামে এক কাশ্মীরি চিকিৎসককে, যিনি ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তদন্তকারীরা এখন এই বিস্ফোরক উদ্ধার এবং দিল্লির বিস্ফোরণের মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন।
দিল্লি বিস্ফোরণের পরপরই মহারাষ্ট্রে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ রাজ্যের সমস্ত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন। ফরিদাবাদে ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধারের ঘটনার পর থেকেই মহারাষ্ট্রে সতর্কতা ছিল, দিল্লির বিস্ফোরণের পর তা আরও জোরদার করা হয়েছে। একইভাবে উত্তরপ্রদেশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অমিতাভ যশ জানিয়েছেন, ডিজিপি সমস্ত জেলায় সংবেদনশীল ধর্মীয় স্থান, সীমান্তবর্তী এলাকা এবং জনবহুল অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাড়ানো হয়েছে টহল ও তল্লাশি।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা এনআইএ, এনএসজি এবং ফরেনসিক দল বিস্ফোরণের ধরন, ব্যবহৃত উপাদান এবং গাড়ির উৎস খতিয়ে দেখছে। দিল্লি পুলিশ গাড়ির মালিকানা ও গতিবিধি অনুসন্ধান করছে। ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস, আর্থিক লেনদেন এবং সম্ভাব্য জঙ্গি সংযোগও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
এই বিস্ফোরণ এবং বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনাগুলি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য প্রশাসন একযোগে কাজ করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দোষীদের খুঁজে বের করতে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊