অবৈধভাবে ভোটার কার্ড থেকে আধার কার্ড, বাংলাদেশের বধূর ভারতীয় পরিচয় নিয়ে দিনহাটায় তোলপাড়
দিনহাটা, কোচবিহার: বাংলাদেশের সিলেটের এক মেয়ের সাথে বিয়ের পর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর হাতে আসে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। কোচবিহারের দিনহাটার ভেটাগুড়ি সিঙ্গিজানি গ্রামের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে একজন বাংলাদেশী মহিলা এত সহজে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিচয়পত্রগুলি পেলেন এবং কাদের সহায়তায় এই প্রক্রিয়া সম্ভব হলো।
জানা গিয়েছে, প্রায় দু'বছর আগে দিনহাটার ভেটাগুড়ি সিঙ্গিজানি গ্রামের রোহন খন্দকারের সাথে বাংলাদেশের সিলেটের বাসিন্দা নিলুফা ইয়াসমিনের সামাজিক মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে রোহনের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে গিয়ে নিলুফার সাথে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। বিয়ের পর পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে নিলুফা দিনহাটায় স্বামীর বাড়িতে আসেন।
প্রতিবেশী এক মহিলা সাবিনা বিবি বলেন, "রোহনের বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশে। দিনহাটায় কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। আসার পরে জানতে পেরেছি নতুন বউয়ের বাড়ি বাংলাদেশে।"
বিয়ের পর দিনহাটা এসে নিলুফা ইয়াসমিন ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তাঁর ভাসুর রাহেনুর খন্দকারের বক্তব্য অনুযায়ী, "এখানে এসে ভোটার কার্ড সহ অন্যান্য সরকারি কার্ডের জন্য আবেদন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোটার কার্ড ছাড়াও আধার কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়।" অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সবক'টি কার্ড পেয়ে যান বলে জানা যায়।
গত বছর নভেম্বর মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই মহিলার কাছে এই কার্ডগুলির জন্য বিস্তারিত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু সেই কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাঁর ভোটার কার্ড বাতিল হয়ে যায়।
নিলুফার শ্বশুর লিয়াকত আলী খন্দকার বলেন, "বিয়ের পর আবেদন করায় ছেলের বউয়ের ভোটার কার্ড ছাড়াও আধার কার্ড হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই সেই ভোটার কার্ড আবার প্রশাসন বাতিল করে। সেই কাগজও আমাদের কাছে আছে। আমার বৌমা বাংলাদেশের সিলেটের বাসিন্দা।"
নিলুফার ভাসুর রাহেনুর খন্দকারও একই কথা উল্লেখ করে বলেন, "হঠাৎ করে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় কাগজপত্র চাওয়া হলে আমরা আমাদের কাছে যা যা কাগজপত্র সেটা দাখিল করি। তারপরেই ভোটার কার্ড বাতিল করে প্রশাসন। কেন ভোটার কার্ড দিয়েছে সেটা আমরা জানি না।"
এই ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি। বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ-সভাপতি বিরাজ বসু বলেন, "এসআইআর শুরু হতেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে। কারণ তৃণমূল নেতারা বুঝে গিয়েছে, ভুয়ো ভোটার যত বাদ পড়বে তাতে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর এসব ভুয়া ভোটার সব তৃণমূলেরই তৈরি করা। এর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"
যেহেতু গত লোকসভা নির্বাচনে ওই মহিলা ভোট দিয়েছেন বলেও এক সূত্রে জানা গিয়েছে, তাই এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভেটাগুড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রিয়াঙ্কা সরকার দে বলেন, "বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখব। এ বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।" ব্লকের বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন, "আমি নতুন এসেছি। সবকিছু খোঁজ নিয়ে পরে জানাব।"
কাদের বদান্যতায় এবং প্রশাসনের কোন স্তরের গাফিলতিতে একজন বিদেশী নাগরিক ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিচয়পত্রগুলি হাতে পেলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়েছে। নিলুফা ইয়াসমিনের আধার কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের বর্তমান অবস্থা কী, সেদিকেও নজর থাকবে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊