শিয়াল কেন থাকে মা কালীর সঙ্গে? জানেন কি?
-ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
হিন্দু ধর্মে তিনি পূজিত হন আদ্যা শক্তি রূপে। তিনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি, ধ্বংসের শক্তি। তিনি ত্রিনয়নী। জ্যোতির্ময়ী মাতৃশক্তি। চণ্ড বধের কালে দেবীর মুখ কৃষ্ণবর্ণ হয়ে উঠলে তাঁর ললাট থেকে যে দেবীর আবির্ভাব ঘটে - তিনিই এই দেবী - কালী।
দেবীর আবির্ভাব শ্মশানে। তাই দেবী শৃগাল-পরিবৃতা। দেবীর বহু প্রতিমাতেই দেখা যায় - দেবীর পাশে রয়েছে শিয়াল, যে দেবীর হাতে ধরা মুণ্ড থেকে নির্গত রক্ত পান করছে।
দেবী আসলে মহাদেবেরই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ - পার্বতীর ধ্বংসাত্মক রূপ। শিব শ্মশানবাসী, শিয়ালও তাই। বিচরণক্ষেত্র - শ্মশান। উভয় ক্ষেত্রেই। দেবীর দক্ষিণ পদ শবের ওপর আর বাম পা শৃগালের ওপর -
"নিক্ষিপ্য দক্ষিণং পাদং সন্তিষ্ঠৎ কুণকোপরি।
বামপাদং শৃগালস্য পৃষ্ঠে ফেরুশতৈর্বৃতম্।।"
কিন্তু এর থেকেও গভীরতর সংযোগ আছে,। আসলে, দেবী নিজেই শিবা অর্থাৎ শিয়াল। তাই তন্ত্রসাধনায় "কালী কালী" বলে শিবারূপধারিণী দেবী উমাকে আহবান করার এবং তাঁকে মৎস্য প্রধান অন্ন দান করার বিধি আছে। কূলচূড়ামণিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিবা দেবীর অর্চনা না করলে সমস্ত পুণ্য বিনষ্ট হয়, সাধক অভিশপ্ত হন :
"পশুরূপাং শিবাং দেবীং যো নাৰ্চ্চয়তি নিৰ্জ্জনে।
শিবারাবেন তস্যাসু সৰ্ব্বং নশ্যতি নিশ্চিতম্॥
জপপূজাবিবিধানি যৎকিঞ্চিৎ সুক্বতানি চ।
গৃহীত্বা শাপমাদায় শিবা রোদিতি নির্জ্জনে॥"
বাস্তবে, দেবী শ্মশানবাসিনী, শিবও তাই। আবার শৃগাল তাই। দেবীর সাধনায় যেমন প্রয়োজন ধৈর্য এবং বুদ্ধি। শৃগালের তা আছে। সাধক সেটাই প্রাথমিকভাবে অর্জন করার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন - নিজের ভিতরে থাকা আসুরিক শক্তির রক্ত পান করতে অর্থাৎ আসুরিক শক্তির অস্তিত্ব বিনষ্ট করতে। আবার শৃগালের মতোই তিনি চেষ্টা করেন সবকিছু বর্জন করে শ্মশানবাসী হওয়ার। তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্রে শ্মশান যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিব - শিবা এবং শিবানী যে তত্ত্বে একসাথে মিশে যাবেন - সেটাই বোধহয় স্বাভাবিক।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊