পুজোর আগে আবহাওয়ার খবরে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে পাহাড় থেকে সমতলে
সিকিম ও উত্তরবঙ্গ: পুজোর আগমুহূর্তে ফের প্রকৃতির প্রহারে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ ও সিকিম। গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড় থেকে সমতল— সর্বত্রই দেখা দিয়েছে বন্যা ও ভূমিধসের আতঙ্ক। জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জেরে শঙ্কিত পর্যটক ও স্থানীয়রা। ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারত আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের গ্রামীণ কৃষি মৌসম সেবা কেন্দ্র থেকে জারি করা পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনেও এই অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ।
শিলিগুড়িতে এক রাতের টানা বৃষ্টিতেই মহানন্দা নদীর জল উপচে পড়েছে। ফুলবাড়ী মহানন্দা ব্যারেজে বিপজ্জনক হারে বেড়েছে জলের চাপ। গাজলডোবায় তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ বিপদসীমা ছুঁইছুঁই, জাতীয় সড়ক ১০-এ তিস্তার জলে ডুবে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। দার্জিলিংগামী রাস্তাতেও জল জমে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে কারণ ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই ৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে।
সিকিমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। উত্তর সিকিমের রিংখোলা ব্রিজের কাছে বিশাল ভূমিধসের কারণে মঙ্গান ও ডজোংগু যাওয়ার রাস্তা বিচ্ছিন্ন। ফিদাং থেকে সাংক্লাং সংযোগকারী সড়কের একাংশ ভেসে যাওয়ায় যোগাযোগ সম্পূর্ণ থমকে গেছে। অন্যদিকে, গ্যালশিং জেলার সারদং লামা গ্রামে ভূমিধসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সভাপতি রাজেন গুরুং (৪৭)। শনিবার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ এলাকা।
সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (SSDMA) ও জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। বাসিন্দাদের ভূমিধসপ্রবণ এলাকা এড়াতে, মাটি ফাটল বা অতিরিক্ত জলপ্রবাহ লক্ষ্য করলেই প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘরে না থাকারও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ কৃষি মৌসম সেবা কেন্দ্র বজ্রপাতের সময় সুরক্ষিত জায়গায় আশ্রয় নিতে এবং বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ।
পুজোর মরশুমে এহেন বিপর্যয় পর্যটনকেও বড় ধাক্কা দিয়েছে। বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন বিভিন্ন স্থানে। যদিও প্রশাসন উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে নেমেছে, স্থানীয়দের মতে আবহাওয়ার উন্নতি ছাড়া স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা নেই। সব মিলিয়ে পুজোর আগে আনন্দের বদলে ফের একবার আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে পাহাড় থেকে সমতলে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊