নবরাত্রির পঞ্চম দিনে হয় দেবী স্কন্দমাতার পূজা, জেনে নিন তার কাহিনি
- ড. শুভদীপ বন্দ্যেপাধ্যায়
তিনি হিমালয়ের কন্যা পার্বতী। তিনিই গৌরী। তিনিই মহেশ্বরী। নবরাত্রির পঞ্চম দিনে তিনিই পূজিতা হন দেবী স্কন্দমাতা রূপে।
নবরাত্রির পঞ্চম দিনে হয় তাঁর আরাধনা। তিনি দেবীর পঞ্চম স্বরূপ - স্কন্দমাতা। দেবসেনাপতি কার্তিকের অন্য নাম স্কন্দ। এই দেবী ষড়ানন কার্তিক অর্থাৎ স্কন্দের জননী - তাই তিনি স্কন্দমাতা। আশ্বিন এবং চৈত্রের নবরাত্রিতে মহাদেবী এই স্কন্দমাতা রূপেই পূজিত হন।
দেবী চতুর্ভুজা। তাঁর ওপরের দুই হাতে পদ্ম আর নিচের একহাতে তিনি ষড়ানন স্কন্দকে ধরে আছেন। স্কন্দ উপবিষ্ট দেবীর ক্রোড়ে। দেবীর অন্য হাত আছে বর মুদ্রায়। দেবী বিরাজ করছেন পদ্মের আসনে। সঙ্গে আছেন বাহন সিংহ।
ভবিষ্য পুরাণে বলা হয়েছে, স্কন্দ কুমাররূপ, শক্তিধর এবং ময়ূর বাহন। ইনি সূর্যের অনুচর। একসময় এই স্কন্দের পুজো বহুল প্রচলিত ছিল। বৌদ্ধ গ্রন্থ ললিত বিস্তরের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় - বুদ্ধের জন্মকালেও এই পুজোর প্রচলন ছিল। বাস্তবে, ক্ষত্রিয়দের মধ্যে যুদ্ধে যাওয়ার আগে তরুণ সূর্যসদৃশ, জ্যোতিস্বরূপ কার্তিকের বন্দনা করার রীতি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ছিল। কারণ বিশ্বাস করা হতো - দেবসেনাপতির কৃপায় কঠিনতম যুদ্ধেও জয়লাভ সম্ভব। এই দেবী যেহেতু সেই কার্তিক অর্থাৎ স্কন্দের মাতা - তাই এই আগুনের দেবীরও পুজো করা হতো বলে মনে করা হয়। উল্লেখ্য, সূর্যের তিনটি বিবর্তিত রূপ আছে। প্রাতঃ সূর্য - যার দেবী সরস্বতী, মধ্যাহ্ন সূর্য - যার দেবী দুর্গা এবং সায়ং সূর্য - যার দেবী লক্ষ্মী। সুতরাং এই সূর্যকে ধরে কোথাও মিলে যান সূর্যের অনুচর স্কন্দ এবং স্কন্দমাতাও। অনুমান করা যায় এই সব বিশ্বাসের অবশেষের কারণে আজও বিশ্বাস করা হয় - এই দেবীর পুজো করলে শুধু দেবীর নয়, কার্তিকের এবং সূর্যেরও আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
প্রচলিত ধারণা - ভক্ত কণ্ঠে যখন উচ্চারিত হয় :
"সিংহাসনগতা নিত্যং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া।
শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী।।"
-তখন এই দেবীর আশীর্বাদে ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূরণ হয়। দেবী তাঁর ভক্তকে শৌর্য, পরাক্রম, সুরক্ষা, বিদ্যা - সবই প্রদান করেন। দান করেন অভয়। নবরাত্রির পঞ্চম দিনে দেবীর আরাধনায় সাধকের মন স্থিত হয় বিশুদ্ধ চক্রে। এই বিশুদ্ধ চক্রে মন স্থিত হলে সাধকের পক্ষে সম্ভব হয় বিশুদ্ধ চৈতন্যে পৌঁছানো।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊