ভারতের ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। আজ, ১১ আগস্ট, ইন্ডিয়া ব্লকের প্রায় ৩০০ জন সাংসদ সংসদ ভবন থেকে পদযাত্রা করে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে যাবেন। সকাল ১১:৩০ মিনিটে এই পদযাত্রা শুরু হবে সংসদের মকর দ্বার থেকে, পরিবহন ভবন হয়ে নির্বাচন সদন পর্যন্ত। বিরোধী দলগুলোর দাবি, নির্বাচন কমিশন বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশে ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে এবং লক্ষ লক্ষ ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিহারে ‘Special Intensive Revision (SIR)’ ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা বিরোধীদের মতে, ভোটারদের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি করছে। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং অভিযোগ করেছেন যে বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) একই ঘরে বসে ‘ভুয়া ফর্ম’ পূরণ করছেন। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী এমন তথ্য তুলে ধরেছেন যা সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা গেছে—একই EPIC নম্বরে একাধিক ভোট পড়েছে। বিহারে কেন SIR হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ২০০৩ সালে এই প্রক্রিয়া দুই বছর সময় নিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল, কিন্তু এবার মাত্র এক মাসে তা শেষ করতে চাইছে কমিশন।
রাহুল গান্ধী এই ইস্যুতে একটি অনলাইন প্রচারণা শুরু করেছেন। ‘ভোট চুরি’ বন্ধ করতে জনগণকে আহ্বান জানিয়ে তিনি একটি ওয়েবসাইট এবং একটি মিসড কল নম্বর চালু করেছেন। তাঁর মতে, ভোট চুরি হল ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ নীতির উপর আক্রমণ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ভোটার তালিকা অপরিহার্য। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করেছেন, ডিজিটাল ভোটার তালিকা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হোক, যাতে জনগণ ও রাজনৈতিক দল নিজেরাই তা যাচাই করতে পারে।
কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ১,০০,২৫০টি ভোট চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাহুল। একই ব্যক্তির নাম একাধিক রাজ্যে দেখা গেছে, যেমন আদিত্য শ্রীবাস্তবের নাম কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশে একই EPIC নম্বর সহ তালিকাভুক্ত ছিল। কর্ণাটকের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা (CEO) রাহুল গান্ধীকে এই অভিযোগের ভিত্তিতে নথি জমা দিতে বলেছেন। যদিও প্রাথমিক তদন্তে ভোটার শাকুন রানি দুবার ভোট দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন এবং রাহুলের জমা দেওয়া নথি পোলিং অফিসার কর্তৃক জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছে কমিশন।
বিহারে SIR-এর মাধ্যমে ৬৫ লক্ষ ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত, ৩৬ লক্ষ স্থানান্তরিত বা অনুপস্থিত, এবং ৭ লক্ষ ডুপ্লিকেট ভোটার বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন। বিরোধীরা বলছে, এই প্রক্রিয়া দরিদ্র, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে এবং এটি একপ্রকার ‘ব্যাকডোর NRC’।
RJD নেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন, বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় সিনহার দুটি EPIC নম্বর রয়েছে, যা SIR-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তিনি বলেন, যদি তাঁর EPIC নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে FIR হবে না কেন?
এই প্রতিবাদ ও প্রচারণা ভারতের গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার দাবিতে বিরোধীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও SIR প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊