স্বাধীনতা সংগ্রামে সমুদ্র উপকূলবর্তী রামনগরের চন্দনপুর জমিদার বাড়ি
মেদিনীপুর: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যখন গোটা ভারতবর্ষ স্বাধীনতার আগুনে জ্বলছে, তখন অবিভক্ত মেদিনীপুরের আনাচে-কানাচেও স্বদেশী আন্দোলনের জমাট বাঁধে। সমুদ্র উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর এলাকার চন্দনপুর গ্রাম ছিল সেই সময়কার স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান ও গোপন ঘাঁটি। মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক না-বলা কাহিনী জড়িয়ে আছে এই চন্দনপুর গ্রামের সঙ্গে।
অগ্নিদগ্ধ জমিদার বাড়ির স্মৃতি
চন্দনপুরের চৌধুরী বাড়ি, যা তৎকালীন জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল, আজও সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বাক্ষর বহন করে। জমিদার পুলিন বিহারী চৌধুরী ও ভূধর চৌধুরীর বংশধর রজত বরণ চৌধুরী তাঁদের পূর্বপুরুষদের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের কথা আজও স্মরণ করেন। ইংরেজরা এই বাড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন কার্যকলাপের খবর পেয়েছিল। ফলস্বরূপ, ব্রিটিশরা বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়, যা আজও সেই সময়ের অত্যাচারের এক জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে।
গোপন আখড়া ও সংগ্রামীদের আনাগোনা
স্বদেশী আন্দোলনের দাপুটে নেতা বলাই লাল দাস মহাপাত্রের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের রামনগরে আন্দোলন এক নতুন প্রাণ পায়। তিনি ছিলেন তৎকালীন রামনগরের এক জনপ্রিয় নেতা। কাঁথি ও রামনগর এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামের গোপন আখড়া চলত চন্দনপুরের জমিদার বাড়ির গোপন ডেরায়।
এই গোপন আখড়ায় বিভিন্ন প্রান্তের বহু সংগ্রামী আসতেন। চন্দনপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে পুলিন রায় চৌধুরী, যামিনী পাহাড়ী, বিজয় মন্ডল, খগেন্দ্র রানার মতো নামগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি কাঁথি থেকে প্রমথ বন্দোপাধ্যায়, ঈশ্বর মাল, সুধীর দাস প্রমুখও জমিদার বাড়ির এই গোপন আখড়ায় নিয়মিত আসতেন। জমিদার বাড়ির গোপন ডেরায় এবং পড়ো মন্দিরে গোপন মিটিং চলতো, পাশাপাশি লাঠি খেলার প্রশিক্ষণও দেওয়া হতো।
এইভাবেই রামনগরের চন্দনপুর জমিদার বাড়ি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছিল, যা আজও এলাকার মানুষের মনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।
0 تعليقات
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊