আলাস্কায় দেখা করলেন নকল পুতিন? ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ঘিরে রহস্য ও বিতর্ক
আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ঘিরে যেমন কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছে, তেমনি ছড়িয়ে পড়েছে এক বিস্ময়কর গুঞ্জন—আসলে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন ‘নকল পুতিন’। তিন ঘণ্টার বৈঠকের চেয়ে বেশি চর্চায় উঠে এসেছে এই দাবির পক্ষে নানা যুক্তি, পর্যবেক্ষণ ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিশ্লেষণ।
বৈঠক চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ঘিরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুরু হয় জল্পনা। অনেকেই দাবি করেন, বৈঠকে উপস্থিত পুতিনের মুখের গড়ন, চোখের চাহনি এবং হাঁটার ভঙ্গি আগের মতো নয়। কেউ কেউ সরাসরি বলেন, এটি ছিল পুতিনের ‘বডি ডাবল’—অর্থাৎ একজন চেহারাসদৃশ প্রতিস্থাপন ব্যক্তি, যাকে বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়। রাশিয়ার ইতিহাসে এমন বডি ডাবল ব্যবহারের নজির রয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে।
ছবিতে দেখা পুতিনের মুখে বয়সের ছাপ কম, চোখের ভঙ্গি অনেকটাই আলাদা। আগের ছবির তুলনায় তাঁর মুখের রেখা অনেকটা মসৃণ, চোখে নেই সেই পরিচিত দৃঢ়তা। হাঁটার ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। সাধারণত পুতিনের হাঁটায় একটি সামরিক শৃঙ্খলা থাকে, যা তাঁর সাবেক গোয়েন্দা পরিচয়ের সঙ্গে মানানসই। কিন্তু আলাস্কার বৈঠকে দেখা ব্যক্তির হাঁটা ছিল অনেকটা সাধারণ, যেন একজন সাধারণ নাগরিকের মতো। এসব পর্যবেক্ষণ থেকেই নেটিজেনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সন্দেহ—আসলে কি পুতিন নিজে এসেছিলেন?
এই গুঞ্জনের মধ্যেই আলোচনার মূল বিষয় ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি। বৈঠকটি শুরু হয় এলমেনডর্ফ বিমানঘাঁটিতে, যেখানে পুতিনকে স্বাগত জানানো হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা, যুদ্ধবিমানের মহড়া এবং দেয়ালে সাঁটানো ‘শান্তির পথে অগ্রযাত্রা’ স্লোগানের মাধ্যমে। ট্রাম্প নিজে উপস্থিত থেকে পুতিনকে অভ্যর্থনা জানান, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। তবে বৈঠকের সময়েই ইউক্রেনে রুশ ড্রোন ও বিমান হামলার খবর আসতে থাকে। সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে। এই বাস্তবতা স্পষ্ট করে দেয়, পুতিনকে সম্মান জানানোর আয়োজন যতই জাঁকজমকপূর্ণ হোক না কেন, যুদ্ধবিরতির পথে তাঁকে আনতে ট্রাম্প সফল হননি।
তিন ঘণ্টার আলোচনার পর দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন। ট্রাম্প বলেন, “আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।” তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন। কিন্তু পুতিনের অবস্থান সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই মঞ্চ ত্যাগ করেন দুই নেতা। এই আচরণ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হলো না? কেন আলোচনার বিষয়বস্তু গোপন রাখা হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর না থাকায় বৈঠকটি ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়।
এই রহস্যের মধ্যেই নকল পুতিনের গুঞ্জন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। কেউ কেউ দাবি করেন, পুতিনের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে তাঁর বডি ডাবল ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কেউ বলেন, এটি ছিল একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল—বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি, তবে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক থামেনি।
বৈঠকটি শুধু আলোচনার জন্য নয়, বরং পুতিনকে আবারও বৈশ্বিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে স্বাগত জানানোর একটি ইঙ্গিতও বহন করে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর পশ্চিমা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়া পুতিন আবারও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের মাটিতে পা রাখলেন। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সদস্য নয়, ফলে আলাস্কাকে বৈঠকের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়ার পেছনে কূটনৈতিক হিসাবও ছিল। পুতিনের বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ‘সমাজচ্যুতি’র অবসান ঘটে। লাল গালিচা সংবর্ধনা, যুদ্ধবিমানের মহড়া এবং স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্টের করতালি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প বুঝিয়ে দিলেন, পুতিন আবার কূটনীতির মূল স্রোতে ফিরছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দুই নেতার হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময়কে ‘এক ঐতিহাসিক করমর্দন’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। যদিও পুতিন এখনো ইউরোপের অনেক দেশে বহিস্কৃত, তবে ট্রাম্পের মতো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী পরিচালনাকারী নেতা তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো কূটনৈতিক বর্জনের প্রচেষ্টা অনেকটা দুর্বল করে দিয়েছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন পুতিন ট্রাম্পের সামরিক গাড়িতে ওঠেন। মুহূর্তেই তা রাশিয়ান নেতার বৈশ্বিক কূটনীতিতে ফেরার প্রতীক হয়ে ওঠে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আলাস্কায় আয়োজিত এই বৈঠক ছিল একদিকে রাজকীয়, অন্যদিকে রহস্যময়। আলোচনার ফলাফল অনিশ্চিত হলেও, পুতিনের জন্য এটি ছিল একটি কূটনৈতিক বিজয়। তিনি আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের উপস্থিতি জানান দিলেন। আর ট্রাম্প, যিনি নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, তাঁকে এখন অপেক্ষা করতে হবে—যখনেরটা তখন দেখা যাবে
0 تعليقات
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊