Potato prices fall : পশ্চিমবঙ্গে আলুর দামে বিরাট পতন, কৃষকদের গভীর উদ্বেগ
পশ্চিমবঙ্গে আলুর দামের (Potato Price) অস্বাভাবিক পতন কৃষকদের (Farmers) মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (West Bengal Cold Storage Association) এই পরিস্থিতিকে একটি বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার ক্ষতির (Loss) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এই পতন কৃষকদের জন্য মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং তারা অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপের (Government Intervention) আহ্বান জানিয়েছেন।
হিমঘরে রাখা আলুর জন্য কৃষকরা কেজি প্রতি মাত্র ৬-৭ টাকা পাচ্ছিলেন, যা তাদের উৎপাদন খরচের চেয়েও কম। অথচ এই আলুই খোলা বাজারে ১৭ থেকে ১৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই ব্যাপক বৈষম্যের কারণে ফড়ে ও বড় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লাভ করছেন, আর কৃষকরা পড়েছেন চরম আর্থিক সংকটে। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন একটি সংবাদ সম্মেলন করে বাজার দর এবং বিক্রি হওয়া আলুর দামে চাষিদের ক্ষতির দিকটি তুলে ধরেছে।
চলতি বছর রাজ্যের হিমঘরে রেকর্ড পরিমাণ, ৭০.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত করা হয়েছিল। সাধারণত আলু উৎপাদনের ৬০% রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার করা হয় এবং বাকি ৪০% অন্যান্য রাজ্যে চলে যায়। কিন্তু গত বছর আন্তঃরাজ্য আলুর পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কারণে, প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আগের জাতের আলুও হিমঘরে সংরক্ষণ করা ছিল। এই কারণে হিমঘরে রেকর্ড পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে যে, এই বিপুল পরিমাণ আলু পড়ে থাকায় এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ায় প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য ন্যূনতম ৯ টাকা প্রতি কেজি সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেছে। সরকারি ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে কৃষকেরা আলু বিক্রি করছেন এবং ভবিষ্যতে বিক্রির জন্য কিছু কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণও করেছেন। এই মরশুমে আলু মজুদের প্রায় ৭৫% থেকে ৮০% কৃষকদের।
আলু ছাড়ার মরসুমে সরকার ঘোষণা করেছিল সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্য ১৫ টাকা প্রতি কেজি দেওয়া হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে তা হুগলি জেলার সিঙ্গুর পাইকারি বাজারে মানের জন্য ১১ টাকা প্রতি কেজিতে নেমে আসে। বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জেলা এবং উত্তরবঙ্গে কোল্ড স্টোরেজ গেটে ৯ টাকা প্রতি কেজি থেকে ১০ টাকা প্রতি কেজিতে নেমে আসে। এতে কৃষকদের সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে কারণ তারা প্রতি কুইন্টালে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। ন্যায্য দাম না দেওয়া হলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে চাহিদা বনাম সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি করবে।
পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রী সুনীল কুমার রানা বলেন, “পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দামের মধ্যে বর্তমান বৈষম্য অস্থিতিশীল। এটি সরাসরি কৃষকদের ক্ষতি করছে। যারা এই মরশুমে প্রায় ৮০% ফসল সংরক্ষণ করেছেন। সরকারকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ক্রয়, আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য এবং মিড-ডে মিলের মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে আলুর ব্যবহার যাতে বাড়ানো হয় এই পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করছি।"
আলুর দামের এই পতন কেবল কৃষকদের সমস্যা নয়, এটি রাজ্যের সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দ্রুত এবং কার্যকর সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট আরও গভীর হতে পারে, যা হাজার হাজার কৃষক পরিবারকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেবে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊