তিস্তা নদীর তীরে শ্রাবণী মেলার প্রস্তুতি


জলপাইগুড়ি, ৬ই জুলাই, ২০২৫: উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব শ্রাবণী মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আগামী রবিবার থেকে তিস্তা নদীর তীরে, জলপাইগুড়ি তিস্তা সেতুর নিচের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বসবে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পুণ্যলগ্নে হাজার হাজার ভক্ত তিস্তায় স্নান সেরে ময়নাগুড়ির ঐতিহাসিক জলপেশ মন্দিরে পুজো দেন। এই মেলা শুধু ধর্মীয় আচারের কেন্দ্রবিন্দু নয়, এটি হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎস এবং সামাজিক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।

উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু: বিশ্বাস ও ভক্তির স্রোত

শ্রাবণ মাস ভগবান শিবের আরাধনার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই মাসের প্রতি সোমবার তিস্তার তীরে ভক্তদের ঢল নামে।

  • পুণ্যস্নান ও পূজা: ভক্তরা তিস্তা নদীতে পুণ্যস্নান করে, ঘট ভরতি জল নিয়ে পায়ে হেঁটে জলপেশ মন্দিরের দিকে যাত্রা করেন। সেখানে শিবের মাথায় জল ঢেলে পুজো দেওয়া হয়।

  • ধর্মীয় সম্প্রীতি: ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে এই উৎসব এক সামাজিক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। মানুষের বিশ্বাস ও ভক্তিই এই মেলার মূল চালিকাশক্তি।

শ্রাবণী মেলার প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা: জীবিকার স্পন্দন

মেলার ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক দিকটিও অনস্বীকার্য। তিস্তার ধার ঘেঁষে ইতিমধ্যেই ছোট-বড় দোকান বসার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

  • পসরা সাজানোর ব্যস্ততা: বস্ত্র, প্রসাধনী, খেলনা, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, খাবার এবং পূজার সামগ্রীর সম্ভার নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিক্রেতারা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দোকানিদের ব্যস্ততায় মেলার প্রাঙ্গণ এখন থেকেই মুখর।

  • আশার আলো: ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভক্ত সমাগম অনেক বেশি হবে বলে তাঁরা আশাবাদী। ভালো ব্যবসার আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা। এই মেলা হাজার হাজার স্থানীয় ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীর কাছে এক বড় অর্থনৈতিক সুযোগ, যা তাঁদের সারা বছরের আয়ের পথকে সুগম করে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

শ্রাবণী মেলা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, এটি উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। একদিকে ভক্তরা যেমন আত্মিক শান্তির খোঁজে আসেন, তেমনই স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা খুঁজে পান অর্থনৈতিক স্বস্তি। তিস্তার তীরে গড়ে ওঠা এই সাময়িক বাজার যেন এক মাস ধরে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে সচল রাখে। ভক্তি, উৎসব এবং জীবিকার এই ত্রিবেণী সঙ্গম শ্রাবণী মেলাকে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে।