তৃতীয়বার রাজ্য সেরা বিলকিস, খুশির হাওয়া দিনহাটায়
কখনো পান্তা ভাত তো কখনো খালি পেটে, স্পোর্টস জুতো তো দূরের কথা বাড়ির পাশের বালু জমিতে বা নদীর চড়ায় চলে অনুশীলন। কোনোরকম প্রশিক্ষন ছাড়াই মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটেই টানা তিনবারের জন্য প্রাথমিক স্কুলের রাজ্যের খেলায় ১০০ মিটার দৌড়ে রাজ্যের সেরা তৃতীয় শ্রেনীর ছোট্ট বিলকিস। লক্ষ্য একটাই খেলোয়ার হয়ে দেশের জন্য পদক আনা। আর সেই খিদেই যেনো তৃতীয়বার রাজ্য সেরার খেতাব এনে দিলো বিলকিস খাতুনকে। কিন্তু বিলকিসের সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবার দারিদ্রতা।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উদ্যোগে পশ্চিম মেদিনিপুরে অনুষ্ঠিত এবছরের ৪০ তম রাজ্য বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবে তৃতীয়বার ১০০ মিটার দৌড় মাত্র ১৪.৮ সেকেন্ডে শেষ করে রাজ্য সেরা হলো বিলকিস। এনিয়ে একটানা তৃতীয়বার খেতাব জয়ে খুশি বিলকিসের স্কুলের শিক্ষক থেকে পরিবারের সকলে। আর বিলকিসের এই সাফল্যে অনেকই তারমধ্যে দেখছে ভবিষ্যতের পি টি ঊষা বা উসাইন বোল্টের ছবি।
দিনহাটা মহকুমার সীমান্তবর্তী গ্রাম দরিবসে বাড়ি বিলকিসের। সেখানকারই দরিবস গভর্মেন্ট প্রাইমারী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী বিলকিস। এর আগেও সে রাজ্য স্তরে দুবার ও জেলা স্তরে একাধিকবার সেরার খেতাব অর্জন করেছে। অপরদিকে বিলকিসের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন পেশায় দিনমজুর বেলাল মিয়া। বিলকিসের বাবার কথায়, সংসারে কষ্ট এতটাই যে মেয়েকে রোজ গরম ভাতই দিতে হিমসিম খেতে হয় তার, আর সেজন্যই ভরসা বাসী পান্তা ভাত। যেটা খেয়েই রোজ সকালে অনুশীলনের যায় সে।
তিনি আরো বলেন, মেয়ে সবসময় বলে বাবা আমি খেলতে চাই দেশের হয়ে পদক আনতে চাই।কিন্তু পাঁচজনের সংসার সামলে বিলকিসের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দিতে পারি না, তেমনি খেলার জন্য ভালো জুতো পর্যন্ত কিনে দিতে পাইনি। তবে সরকারি সুযোগ পেলে হয়তো মেয়েটা আরো দূরে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিরি জেলা সভাপতি সুব্রত নাহার বলেন কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের তৃতীয় শ্রেনীর পড়ুয়া বিলকিসের সাফল্যে আমরা সকলেই খুশি। তবে বিলকিস যে ভাবে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে,তাই সরকারি সাই এর মতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যদি প্রশিক্ষণ পায় তাহলে আগামিতে সে দেশের হয়ে পদক আনবে নিশ্চিত। নয়তো অভাবের তাড়নায় একদিন হারিয়ে যাবে বিলকিসের মত সোনার মেয়ে।
এদিন বাড়ি ফিরতেই দিনহাটা রেল স্টেশন থেকে ফুলের মালা পরিয়ে গাড়িতে করে বিলকিসকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান তার স্কুলের শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা। স্টেশন চত্বরে ছোট্ট একরত্তি সোনার মেয়েকে একটিবারের জন্য আদর করতে অনেকটা হুড়োহুড়ি লেগে যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে l
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊