ডাল মে কালা হ্যায়, ইয়া সব কুছ কালা হ্যায়! ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম প্রধান বিচারপতি
স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় আজ সুপ্রিম শুনানিতে ২০১৬ সালের পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করা হবে, না কি যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের আলাদা করার নির্দেশ দেবে শীর্ষ আদালত, তা জানতে উদ্গ্রীব সকলেই। আজ সুপ্রিমকোর্টে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার মন্তব্য, “নম্বর কারচুপি হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার নম্বর বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান যোগ্য ও অযোগ্য নির্বাচনে রাজ্যের কি মত। রাজ্যের আইনজীবী রাজ্যের সমর্থন আছে বলেই জানান। এমনটাই খবর। এসএসসির আইনজীবী আদালতে জানান, নিয়োগ তালিকায় থাকা যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করা সম্ভব। তার পরেই এসএসসির উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “আমাকে বোঝান কেন হাই কোর্ট বলল (যোগ্য-অযোগ্য) আলাদা করা সম্ভব নয়?”
এদিকে চাকুরি হারানোদের আইনজীবী সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর শিট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ৬৫বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী ওই সমস্ত ওএমআর শিটের বৈদ্যুতিন তথ্য যাচাই করার কোনও শংসাপত্রও নেই বলেই জানান। জবাবে বিচারপতি বলেন, “৬৫বি নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আসল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে। ৬৫বি করলে বোঝা সম্ভব হার্ড ডিস্ক থেকে কী ডাউনলোড করা হয়েছে। আর কী আপলোড করা হয়েছিল। এর সঙ্গে প্রমাণের কী সম্পর্ক রয়েছে?” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “৬৫বি করে বোঝা সম্ভব নয় সার্ভারে তথ্য কারচুপি হয়েছে।”
ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে কিনা, করলেও কতদিনের মধ্যে করা হয়েছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি। আইনজীবী জানান, একবছর পর নষ্ট করার নিয়ম তবে মিরোর ইমেজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, “কেউ ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করে রাখেনি। এসএসসি করেনি। তারা দায়িত্ব দিয়েছিল নাইসাকে। তারাও করেনি। নাইসা আবার স্ক্যানটেককে দায়িত্ব দেয়। তারাও সংরক্ষণ করেনি। স্ক্যানটেক স্ক্যান করেই ছেড়ে দিয়েছিল।”
এসএসসি কে দুষে রাজ্যের আইনজীবী জানান, কোনো টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে এই কাজের বরাত দিয়েছে এসএসসি। প্রধান বিচারপতি বলেন, “অনেক কিছু গোপন করা হয়েছে। একটা জিনিস পরিষ্কার, আসল এবং স্ক্যান ওএমআর শিট একই নয়।” মেটা ডেটা খুঁজে যোগ্য ও অযোগ্য খুঁজে বের করতে হবে মন্তব্য প্রধান বিচারপতির। প্রধান বিচারপতি বলেন, “সঠিক বিষয় হল এসএসসি মিরর ইমেজ রাখেনি। আসল কপি নেই। প্রমাণ বলতে শুধুমাত্র স্ক্যান কপি রয়েছে। আবার তার সঙ্গে এসএসসির বসানো নম্বরের মিল নেই। এমনকি স্ক্যানিং-এ অনিয়ম করা হয়েছে।”
সুপারনিউমেরি পোস্ট নিয়ে বিচারপতি বলেন, অযোগ্যদের না খুঁজে এই পোস্ট তৈরি করা হল কেন? অযোগ্যদের বাদ না দিতেই? যদিও রাজ্যের আইনজীবীর সাফাই নিয়োগ করা হয়নি। হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া নিয়োগ করা যেত না। এসএসসি-র আইনজীবী শীর্ষ আদালতে বলেন, “২৬ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিছু নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু পুরো নিয়োগে নয়। ধাপে ধাপে পরীক্ষা হয়েছে। তাই সব ওএমআর শিট সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব ছিল না। ২০২১ সাল পর্যন্ত কোনও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়নি।”
প্রধান বিচারপতি এসএসসির উদ্দেশে বলেন, “অন্যের হাতে তথ্য তুলে দিলেন। নিজেদের হাতে রাখলেন না? কী ভাবে এটা করতে পারলেন? আপনারাও কারচুপি করেছেন। পঙ্কজ বনসল যে কারচুপি করেছে তা জানা গিয়েছে। সমস্যা আপনাদের নিয়ে।” একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, “কোন কোন ওএমআর শিটের তথ্য ক্যাপচার করা হয়েছে? সেটা দেখে দুপুর ২টোর মধ্যে জানান।”
শুনানির একটি পর্বে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী বলেন, “দেশে এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখানে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সমস্যা হয়নি। তবে এটাতে উৎসাহ দিচ্ছি না।” তার পরেই বিদ্রুপের সুরে প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি জানেন না “ডাল মে কালা হ্যায়, ইয়া সব কুছ হি কালা হ্যায়। (কিছু গন্ডগোল আছে, না কি পুরোটাই গন্ডগোল)।” তারপরে স্থগিত হয় শুনানি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊