কামারহাটিতে চ্যাটার্জি বাড়ির জোড়া দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি ঘিরে তোড়জোর
কামারহাটিতে চ্যাটার্জি বাড়ির জোড়া দুর্গাপুজোর তোড়জোড় চলছে জোর কদমে। শতাধিক প্রাচীন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজোকে কেন্দ্র করে কামারহাটি বিধানসভার অন্তর্গত চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোয় রয়েছে ইতিহাস। পাড়ায় পাড়ায় থিমের লড়াই এর মাঝে কামারহাটি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ঠাকুর দাস চ্যাটার্জী রোডের ধারে দ্বিতল বিশিষ্ট অবস্থিত চ্যাটার্জি বাড়ি। একদিকে এই বনেদি বাড়ির পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে । আরেকদিকে চ্যাটার্জি বাড়ির বারোয়ারী পূজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত উদ্যোক্তারা।
১৯১০ সালে কামারহাটি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত গঙ্গার পাড়ে এইচ এম চ্যাটার্জি রোডের ধারে শুরু হয় কামারহাটি সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পরিচালনায় দেবী দুর্গার আরাধনা । মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার মাঝে নিয়ম নিষ্ঠা ভরে সারন্বরে বিগত ১১৪ বছর ধরে এই পূজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। ১৫ বছর টানা এই চ্যাটার্জি বাড়ির উদ্যোগে বারোয়ারী পূজো হলেও পরবর্তীতে রাজ নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ১৯২৫ সালে প্রথম আনা হয়েছিল জগদম্বাকে । সেখান থেকে আবার চ্যাটার্জি বাড়ির ঠাকুর দালানে দেবী দুর্গার রেখে আরাধনার আয়োজন করা হয়। যার নাম ঈশ্বরাশ্রম। সেই থেকে আজও প্রতিবছর চ্যাটার্জি বাড়ির পুজো এবং বাড়ি লাগোয়া বারোয়ারী পুজোকে ঘিরে বাড়ির সদস্য থেকে শুরু করে এলাকাবাসীদের উৎসাহ থাকে ব্যাপকভাবে।
শতাধিক প্রাচীন ইতিহাস বিজড়িত চ্যাটার্জি বাড়ির প্রতিটি কোণ জুড়ে রয়েছে নানা ইতিকথা। স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ছায়া সঙ্গী ছিলেন রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাই বিপ্লবী সুরেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যিনি বরানগর বোমা মামলায় অন্যতম একজন মূল অভিযুক্ত ছিলেন। তার ফলে বহু স্বাধীনতার সংগ্রামীদের আনাগোনা ছিল এককালীন এই বাড়িতে।
একশো বছরের পুরনো কামারহাটির চ্যাটার্জী বাড়ির বনেদি পুজো নিজেরাই বহমান ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় যা চলে আসছে আজও, প্রতি বছর। থামে ঘেরা অট্টালিকায় বিশাল ঠাকুর দালান। তাতে একচালার ডাকের সাজে দুর্গা । পরিবারের নিজস্ব আচার রীতিনীতি মেনে জাঁকজমকের পুজো- বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর ট্রেডমার্ক। কামারহাটির এই চ্যাটার্জি বাড়ীতে প্রতিবছর সাবিকিয়ানায় দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হয়। মা দুর্গার গয়না থেকে শুরু করে অস্ত্র এবং তার যার সন্তানের গহনার সাজে রয়েছে বিশেষত্ব। বাড়ির সোনার গয়না দিয়ে দেবী দুর্গার সহ লক্ষ্মী গণেশ কার্তিক সরস্বতীকে সাজিয়ে তোলা হয়। তার সাথে সাথে দেবী দুর্গার হাতের অস্ত্র ও বাড়ির সোনার অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়।
চ্যাটার্জি বাড়ির বৈষ্ণব ভিটেতে সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমী তিথিতে চাল কুমড়ো, কলা এবং আঁখ বলি দেওয়া হয়। দুর্গা দালানের প্রবেশের মুখে মাটি দিয়ে একটি অস্থায়ীভাবে বলির বেদী তৈরি করা হয়। নবমীতে সেই বলির বেদি ভেঙে মাটি খেলা হয় এলাকা জুড়ে। কথিত আছে, এই মাঠে গায়ে মেখে গঙ্গায় স্নান করলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পুজোর জন্য মূলত বাড়ির গাছের ফুল ব্যবহৃত হয়। পাঁচ প্রজন্ম ধরে একইভাবে সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা ভরে নিজেদের বাড়ির দেবী দুর্গার আরাধনার সমস্ত আয়োজন করে থাকে। পুজোর কদিন বাড়ির দুয়ার থাকে জনসাধারণের জন্য সারাদিন খোলা। যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণের উর্ধ্বে গিয়ে বহু মানুষ ভিড় জমান চ্যাটার্জি বাড়ির পুজোতে। প্রচলিত আছে, এই পূজোতে এসে কিছু চাইলে তার মনস্কামনা ঠিক পূরণ হবে। চ্যাটার্জি বাড়ির সামনে বাড়ির পুকুর থেকে মাছ ধরে তাদের রান্না করা হয় পুজোতে। এর পাশাপাশি পূজোর কদিন পরিবারের নির্দেশে কোন ভক্ত বিনা প্রসাদে যেতে পারবেন না। ঠাকুরদালানের পিছনে রয়েছে সুবিশাল রান্নাঘর থেকে শুরু করে বড় উঠোন। রয়েছে সেই শতাধিক প্রাচীন বেলতলা। যেখানে আজও সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা বলে পুজোর কাজকর্ম করা হয়। জোর কদমে চলছে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি। একদিকে চ্যাটার্জি বাড়ির ঈশ্বরাশ্রমে পুজোর তোজোড় চলছে একেবারে তুঙ্গে। কোনরকম খামতি রাখা যাবে না। আরেক দিকে চ্যাটার্জি বাড়ির উদ্যোগে শুরু হওয়া কামারহাটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পূজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ঘিরে ব্যস্ততা ব্যাপকভাবে।
0 মন্তব্যসমূহ
thanks