অটলবিহারী-মনমোহনের আমলে ঠাঁই মিললেও মোদী জামানায় পূর্ণমন্ত্রীতে ঠাঁই হল না বাংলার

pm modi


২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও টিডিপি, জেডিইউ সহ এনডিএর অন্যান্য শরিক দলকে সঙ্গে সরকার গঠন করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শপথ নিয়েছেন অন্যান্য মন্ত্রীরাও। বাংলা থেকে মোদীর মন্ত্রীসভায় ঠাঁই হয়েছে দুই জনের। সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর। তবে পূর্ণমন্ত্রী নয় পেলেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। বাংলা থেকে কোনো সাংসদকেই পূর্ণমন্ত্রী দেওয়া হল না। এই প্রথম নয় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারে কোনোবারই পূর্ণমন্ত্রী পায়নি বাংলা। না ২০১৪ না ২০১৯ না পেল ২০২৪-এও।

২০১৪ ও ২০১৯ -এ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি যে নেতারা সাংসদ হয়েছিলেন, তাঁদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না থাকায় পূর্ণমন্ত্রী করা যায়নি। কারণ, পূর্ণ মন্ত্রী হতে গেলে প্রশাসনিক বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। ফলে জন বার্লা, দেবশ্রী রায়, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াদের তাই পূর্ণ মন্ত্রী করা যায়নি। তবে এবার বাংলায় সিট কমেছে বিজেপির। ১৮ থেকে ১২তএ এসেছে বিজেপির সিট সংখ্যা। উত্তরবঙ্গ থেকে ছয়টি ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ছয়টি সিট পেয়েছে বাংলা ফলে মন্ত্রীসভায় ৪ থেকে ২-এ নেমেছে বাংলার প্রতিনিধি। প্রথমবার জয়ীদের মন্ত্রী করা হবে না। সেই শর্তে প্রথমেই মনোজ টিগ্গা, কার্তিক পাল, সৌমেন্দু অধিকারী, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হয়নি। মন্ত্রীত্ব পেলেন সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর।

শান্তনু ঠাকুর এবার দ্বিতীয়বার মন্ত্রীসভা ঠাঁই পেলেন। প্রথমবার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এবারও তাঁকে প্রতিমন্ত্রীই করা হল দেওয়া হল না পূর্ণমন্ত্রী। যদিও বাজপেয়ী ও মনমোহন মন্ত্রিসভায় বাংলার নেতানেত্রীরা কেন্দ্রে বড় দায়িত্ব সামলেছেন। কেন্দ্রে দুই দুবার মন্ত্রীত্ব পেয়েছিলেন বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে বাংলা প্রচুর রেল প্রকল্প পেয়েছে। নতুন নতুন মেট্রো পেয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে।

আবার, প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রে প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সেসময় বাংলায় উন্নতি হয়েছে। বাংলায় অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নে একলপ্তে ৮৭৫০ কোটি টাকার অনুদানের ঘোষণা হয়েছিল। তথ্য ও সম্প্রচার, জল সম্পদ উন্নয়ন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাস মুন্সি। মন্ত্রিসভার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি তথা ক্যাবিনেট কমিটি অফ সিকিউরিটির সদস্য ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১২ সালের ২৬ জুন তিনি অর্থ মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কারণ সেসময় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন গত এক যুগে বাংলা থেকে কেন্দ্রের শেষ পূর্ণমন্ত্রী। মন্ত্রিসভা থেকে প্রণব সরে যাওয়ার পর বাংলা থেকে অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেই প্রতিমন্ত্রী ছাড়া বাংলার কপালে আর কিছু জুটল না বিগত এক যুগে।

অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকে মনমোহন সিংয়ের আমলে বাংলা থেকে পূর্ণমন্ত্রী পেলেও নরেন্দ্র মোদীর আমলে বাংলা থেকে কোনো পূর্ণমন্ত্রী নেই। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীসভায় পূর্ণমন্ত্রীতে ব্রাত্যই থেকে গেল বাংলা।

বলে রাখা ভালো, খাতায় কলমে প্রতিমন্ত্রীদের কাজের দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা হয় না। অতীতে বাজপেয়ী ও মনমোহন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীদের কাছে সেই মন্ত্রকের পূর্ণ মন্ত্রীদের কাছ থেকে কোনও ফাইলই আসতো না। এমনকি ইউপিএ সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীরা একবার সমষ্টিগত ভাবে মনমোহন সিংয়ের কাছে নালিশ করেছিলেন। মোদী জমানাতেও ব্যতিক্রম হয়নি। গত দশ বছরে এমনও শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেই বেশির ভাগ কাজকর্ম চলে।