"জয়নগর এখন শ্মশান পুরি" অসহায় মানুষদের আশ্রয় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়
জয়নগর: এই জায়গা প্রথম শব্দ হচ্ছে "জয়"। জয় মানে আনন্দ বা উচ্ছ্বাস। তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের ঘটনার পর থেকে জয়নগর যেন শ্মশানপুরীতে পরিণত হয়েছে। কালীপুজোর দিন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিনে ই জীবন যেন ওলট-পালট হয়ে গেল। সোমবার সকালে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় জয়নগরের তৃণমূল নেতা সাইফুদ্দিন লস্করের। আর এই খুনের ঘটনা কয়েক ঘন্টা পর থেকেই যেন রণক্ষেত্রের চেহারা নাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের দলুয়াখাঁকি গ্রাম। গ্রামে যেন লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে গিয়েছে একের পর এক বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে অসহায় হয়ে কাঁদছে একরত্তি শিশু থেকে শুরু করে মহিলারা। এই ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে দমকল কিন্তু গ্রামের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেরা তারাই আগুন লেভাতে ছুটে আসে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আধপোড়া চাল। হাত দিয়ে টেনে সেগুলোই একটা পাত্রে তুলে নিচ্ছেন তাঁরা, এই দৃশ্য দেখা গেল মঙ্গলবার সকালে। জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, কিছু তো খেতে হবে।বাড়িতে নেই একজনও পুরুষ। আতঙ্ক চোখে-মুখে।তবু বেঁচে থাকার লড়াইটা তো থামালে চলবে না। তাই সেই পোড়া ঘরেই ছড়িয়ে থাকা চাল কুড়োচ্ছেন মহিলারা।কারও কোলে একরত্তি সন্তান, কোনও বাড়িতে শুকনো মুখে বসে আছে বছর চারেকের নাবালিকা। চাল-ডাল তো দূরের কথা, জল-বিস্কুট জোটাতেই বেগ পেতে হচ্ছে পরিবারগুলিকে। সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পর যাঁদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁরা বলছেন, পুলিশ-প্রশাসন কোনও সাহায্যই করছেন না। চোখে জল নিয়ে মায়েরা বুঝে উঠতে পারছেন না কী খেতে দেবেন সন্তানকে?
গ্রামবাসীদের অভিযোগ তারা সিপিএম করে তাই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই খুনের সঙ্গে সিপিএমের নাম জড়িয়ে গ্রামে ২০ থেকে ২৫ টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে গ্রামের কেউ জড়িত নয় শুধুমাত্র সন্দেহবশত এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। অসহায় গ্রামবাসীদের সাহায্যের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে ওই গ্রামের ছুটে গিয়েছিল বাম প্রতিনিধি দল। পুলিশে বাধার সম্মুখীন হয়ে গ্রামে ঢুকতে পারেনি বাম প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বরা। অসহায় গ্রামবাসীদের পরিবারদের নিয়ে আসা হয়েছে, জয়নগরের দক্ষিণ বারাসাতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়। সেখানেই গ্রামবাসীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে দুবেলা মুঠো খাওয়ার। এই কনকনে শীতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় এখন নিজেদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলুয়াখাঁকি গ্রামের অসহায় মানুষদের।
এ বিষয় এক অসহায় মহিলা জানান,কিছু তো খেতে হবে। কেউ তো খেতে দিচ্ছে না। তাঁরা জানাচ্ছেন, রান্নার উনুন পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বাড়ির পুরুষেরা সবাই আতঙ্কে ঘরছাড়া। তাঁরা কোথায় কেউ জানেন না। মহিলারা বলছেন, “পুলিশ চলে গেলেই ওরা মারধর করবে বলেছে। মেয়েদের ওপর অত্যাচার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।” উপায় কী হবে এবার? কেউ জানেন না।
এ বিষয় রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জয়নগরের সিপিএম নেতা অপূর্ব প্রামাণিক তিনি জানান, জয়নগরের যে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে তা কারোর অজানা নেই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জয়নগর। এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমে দলে কোন যোগ নেই। শুধুমাত্র সন্দেহবশত গ্রামের পর গ্রাম বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। গ্রামের মহিলারা ও শিশুরা অসহায় হয়ে পড়েছে তাই দলের পক্ষ থেকে ওদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। গোটা গ্রাম যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊