মেধা তালিকা বাতির হাইকোর্টের, চাকরি হারাতে পারে কয়েকশো কনস্টেবল!

WBP Recruitment


পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড এর অধীনে নিয়োগকৃত কনস্টেবল পদে চাকরি যেতে পারে কয়েকশ কনস্টেবলের। হ্যাঁ এমনটাই বলছে তথ্য। কলকাতা হাইকোর্টের প্যানেল বাতিলের নির্দেশের পর কার্যত চাকরি যাওয়ার পথেই কয়েকশো কন্সেটবলের। ৮৪১৯ পুলিশ কনস্টেবলের নিয়োগের তালিকা বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।



জানা যাচ্ছে, পুলিশের চাকরির ইন্টারভিউয়ের আগেই কিছু পরীক্ষার্থীর হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক তথ্য আসার অভিযোগ ওঠে। কারা ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকবেন, কারা প্রশ্ন করবেন, সেই তথ্য জানতে পেরেছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। মেধা তালিকা প্রকাশের পরেও কিছু অনিয়ম সামনে আসে। সেই অনিয়মের অভিযোগ এনেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল পদের কিছু চাকরিপ্রার্থী।



সেই মামলার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষনা করে। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চএর রায় ঘোষণার পরেই কয়েকশো কনস্টেবলের চাকরি যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।



নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে তুলে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলে দাবি করেছিল মামলাকারী। ২০১৯ সালে শুরু হয় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। দুইটি মেধা তালিকা প্রকাশ করে বোর্ড। প্রথম প্রকাশিত মেধা তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে হয় মামলা। ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে প্রথম মামলা হয়। ত্রুটি শুধরানোর নির্দেশ দিয়েছিল স্যাট। এরপর দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করে বোর্ড। সংরক্ষণের নিয়ম মেনে প্রকাশ করা সেই তালিকায় নতুন করে চাকরিও পান অনেকে। কিন্তু এবার হাইকোর্ট দ্বিতীয় তালিকাটি বাতিল করে প্রথম মেধা তালিকাটিকেই মান্যতা দিয়েছে। স্যাটকেও বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।



সংরক্ষণ নীতি মেনেই মেধা তালিকা প্রকাশ করেছিল বোর্ড, বোর্ড জানিয়েছিল যে সব সংরক্ষিত প্রার্থী সাধারণ প্রার্থীর সমতুল্য এবং বেশি নম্বর পেয়েছেন মেধাতালিকায় তাঁদের সাধারণ প্রার্থী হিসাবেই গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু স্যাট, সাধারণ এবং সংরক্ষিত প্রার্থীদের আলাদা ভাবে নতুন প্যানেল প্রকাশ করে নিয়োগ করার নির্দেশ দিলে পুলিশ রিক্রুইটমেন্ট বোর্ড স্যাটের নির্দেশ মতো মেধা তালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ করে। আর জেরেই বেশি সংখ্যক সাধারণ ক্যাটাগরির প্রার্থী চাকরিতে সুযোগ পান। এবার কলকাতা হাইকোর্ট প্রথম তালিকাকে মান্যতা দিল। স্যাটের নির্দেশে প্রকাশিত তালিকাকে বাতিল করলো। এর ফলে বেশ কিছু চাকরিরত কনস্টেবলের চাকরি যাওয়ার কথা।



বেঞ্চ বলেছে ‘‘পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের প্রকাশিত প্রথম মেধাতালিকাই বহাল থাকবে। ২০২১ সালের তালিকা বা প্যানেল পুনরুদ্ধার করতে হবে। ওই প্যানেল অনুযায়ীই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।’’



প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কনস্টেবলের ৮৪১৯ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড। ২০১৯ সালের ৪ অগস্ট প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল লিখিত পরীক্ষা হয়। তবে নম্বর ভিত্তিক ফল প্রকাশ হয়নি। রোল নম্বর ব্যবহার করে শারিরীক পরীক্ষার অ্যাডমিট ডাউনলোড করার কথা বলে বোর্ড। সেই মতোই চলে প্রক্রিয়া। যাদের শারিরীক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড আসেনি তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি বলেই ধরে নেওয়া হয়। এরপর ১৩ই জুলাই থেকে শুরু হয় ইন্টারভিউ। ১২৭৮৬ জনের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকে বোর্ড। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের কয়েকদিন আগে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে, কারা ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকবেন, কারা প্রশ্ন করবেন, সেই তথ্য জানতে পেরেছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। অনিয়মের আশঙ্কা করা হয়। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয় মেধাতালিকা। প্রার্থীদের লিখিত এবং ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বরেরও উল্লেখ না থাকার পাশাপাশি ক্যাটাগরি অনুযায়ী তালিকা প্রকাশ হয়নি। এমনকি কোনো পরীক্ষার্থীর নম্বর প্রকাশ করে নি। ফলে একে অপরের নম্বর তুলনা করার সুযোগ মেলেনি। ফলে মামলাকারীরা নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলে। স্বজনপোষনের অভিযোগ তোলে।



২০২১ সালের ১০ মার্চে স্যাটে মামলা হয়। ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি স্যাট বোর্ডকে নতুন করে তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়। যদিও পুরো প্রক্রিয়া বাতিলের আবেদনে সাড়া দেয়নি স্যাট। এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাইবুনালের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা হয়।