হার না মানা মেয়েদের গল্প-  ফ্রান্সে পাড়ি রিমাদের


two lady



চার পাশে শুধুই ঘন জঙ্গল। পুরো আকাশটাকে দেখতে পাওয়াটাই যেখানে দুঃসাধ্য, তার মাঝে থেকেও প্রচারের আলো সহ নানান প্রতিকূলতার বিরূদ্ধে লড়ে বার বার বিশ্ব জয় করে ঘরে ফেরে ওরা। দেশ থেকে বিদেশ-সবখানেই জয়জয়কার তাদের। মেয়েদের রাগবি প্রশিক্ষণ দিয়ে খোলা আকাশে এগিয়ে যাওয়ার একরাশ প্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন রোশন।



পাঁচশো বছরের ইতিহাস যার, সেই বৈকুণ্ঠপুর স্টেটের গভীর জঙ্গল ঘেরা পথ দিয়ে বুনো হাতিকে ডজ ড্রিবলিং করে বড় হয়েছে ওরা। মা বাবা জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত জলপাইগুড়ির সরস্বতীপুর চা বাগানের শ্রমিক। এক প্রকার বলতে গেলে, বন্য হাতি, জংলী শুয়োরের আক্রমণ থেকে নিজেদের আত্মরক্ষা করার মধ্যেই যেন সুপ্ত ছিলো ওদের খেলাধুলো। তবে সঠিক সময়, সুযোগ এনে দেয়।


এই চা বাগানের শ্রমিক পরিবারেরই একজন রোশন খাখরা। দীর্ঘদিন কলকাতায় থেকে রাজ্য মহিলা রাগবি দলের কোচের ভূমিকা পালন করার পর ২০১৩ সালে ফিরে আসেন নিজের ভূমিতে। ঠিক যেন ঢাল, তরোয়াল ছাড়া নিধিরাম সর্দার।


তবে মনের সুপ্ত ইচ্ছেকে হাতিয়ার করেই জঙ্গল ঘেরা চা বাগানের মেয়েদের নিয়ে খেলো রাগবি নামক সেচ্ছা সেবী সংস্থার সামান্য সাহায্যে দিয়েই শুরু করেন রাগবি প্রশিক্ষণ।


আদিবাসী মেয়ে গুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে নিঙড়ে বার করে আনতে দিন রাত এক করে দেন রোশন খাখরা। অবশেষে সাফল্য উঁকি দেয় জঙ্গল ভেদ করে। এই মুহুর্তে এই চা বাগান থেকে এগারো জন মহিলা রাগবি খেলোয়াড় দেশ এবং বিদেশের মাটি কাপিয়ে ঘরে ফিরছে বার বার। যার মধ্যে রয়েছে দুবাই, থেকে ফ্রান্স।


আগামীতে জলপাইগুড়ি জেলার আরেকটি জনপদ ওদলাবাড়ীতে মহিলাদের রাগবি প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন তিনি।


তবে যাদের হাত ধরে এসেছে সাফল্য আজও তারা আটকে রয়েছে সেই আর্থ সামাজিক গণ্ডির মধ্যেই। দুদিন পরে রিমা ওরাও মেয়েদের ভারতীয় অনূর্ধ ১৫ রাগবি দলের কোচ হয়ে পাড়ি দেবে ফ্রান্সে। সেই রিমা সহ অন্যান্য খেলোয়াড়দের রান্না ঘর, কুড়িয়ে আনা জঙ্গলের খড়ির আগুনে কালো হয়ে যাওয়া ভাতের হাড়ি খুব সহজেই অঙ্ক মিলিয়ে দেয় প্রচার এবং রাষ্ট্রের অসহযোগিতার সমীকরণ।


তবুও মুখে এক গাল হাসি আর বজ্র আঠুনি নিয়ে রিমার চোখের ভাষা বুঝিয়ে দেয় এবারেও ফ্রান্সে দেশের পতাকা হাতে তুলে বিজয়ীর হাসি হাসবে তারাই।