দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে জয়, এক মাসের শিক্ষক শঙ্করবাবু
সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান :-
টানা ২০ বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে এক মাসের জন্য শিক্ষকতার চাকরি পেলেন পারাজের শিক্ষক।আদালতের নির্দেশে বুধবার গলসী ১নং ব্লকের জাগুলী পাড়া এমএসকে তে ভাষা সম্প্রসারক হিসাবে কাজে যোগ দিলেন শঙ্করপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য। মঙ্গলবার বিকালেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের এ ই ও শঙ্করবাবুর হাতে নিয়োগ পত্র তুলে দেন। আর এই নিয়োগ পত্র হাতে পেয়েই দুচোখ জলে ভরে গেল শঙ্করবাবুর।
প্রায় ২০ বছর আগে তাঁকে গলসী ১ নং ব্লকের জাগুলিপাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভাষা সম্প্রসারক হিসাবে নিয়োগের জন্য বিডিওকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক। কিন্তু নিয়োগপত্র পাননি। এই পদে চাকরির মেয়াদ ৬৫ বছর পর্যন্ত। বুধবার শঙ্করবাবু যখন ভাষা সম্প্রসারক হিসাবে কাজে যোগ দিলেন তখন তাঁর বয়স ৬৪ বছর ১০ মাস ২৮ দিন।
গলসী ১নং ব্লকের জাগুলিপাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভাষা সম্প্রসারক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তাতে চল্লিশোর্ধ অনার্স ডিগ্রীধারীরা আবেদন করতে পারবে বলে জানানো হয়। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী তিনি আবেদন করেন। ২০০৩ সালের ১২ অক্টোবর নিয়োগের জন্য ইণ্টারভিউ ডাকা হয়।
ইণ্টারভিউয়ের পর একজনকে নিয়োগ করা হয়। নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেন শঙ্করবাবু। অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ)। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগের সারবত্তা মেলায় অতিরিক্ত জেলাশাসক ২০১০ সালের ১৯ মার্চ বিডিওকে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেন।
তাতে শিক্ষাকেন্দ্রের ম্যানেজিং কমিটিকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য বিডিওকে বলা হয়। পরবর্তীকালে আরও একটি নির্দেশিকা পাঠিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক শঙ্করবাবুকে নিয়োগের জন্য বলেন। শঙ্করবাবু জানিয়েছেন, সেই নির্দেশ ম্যানেজিং কমিটি কার্যকর না করায় ২০১১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি।
২০১৭ সালে হাইকোর্ট অতিরিক্ত জেলাশাসকের নির্দেশ কার্যকর করার জন্য আদেশ দেয়। সেই নির্দেশকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন নিয়োগপত্র পাওয়া ব্যক্তি। হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। যদিও তারপরেও বিগত বাম সরকার থেকে বর্তমান তৃণমূল সরকার কেউই তাঁকে নিয়োগপত্র দেননি। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তাঁকে নিয়োগপত্র দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তারপরেই রাজ্য তথা জেলা প্রশাসন বাধ্য হলেন তাঁকে নিয়োগ পত্র দিতে।
যদিও শঙ্করবাবুকে যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে তাতে লেখা হয়েছে, ভাষা সম্প্রসারক হিসাবে শঙ্করবাবুকে নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও তিন বিগত কোনো বছরের কোনো বকেয়া পাবেন না। শঙ্করবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
নিয়োগপত্রে যে বকেয়া দেওয়া হবে না বলা হয়েছে, তার জন্য দায়ী কে? আদালত বারবার তাঁকে নিয়োগপত্র দেবার জন্য বলেছে। কিন্তু অজানা ও রহস্যজনক কারণে তাঁকে বছরের পর বছর বঞ্চনা করা হয়েছে। এর দায় কার। তিনি তো কাজ করতেই চেয়েছিলেন। তাঁকে করতে দেওয়া হয়নি।
তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন। অন্যায়ভাবে তাঁকে বঞ্চনার বিচার চাইবেন তিনি। এদিকে, একেবারে অবসরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শঙ্করবাবুর এই জয়কে ভগবানের কৃপা বলে উল্লেখ করেছেন তাঁর সহধর্মিনী ডলি ভট্টাচার্য্য।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊