মনোনয়ন জমা দিতে আসা সিপিএম প্রার্থী, কর্মীদের ওপর তৃণমূলের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র বর্ধমান

Burdwan news


সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান:- 

গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা দিতে আসা সিপিএম প্রার্থী, কর্মীদের ওপর তৃণমূলের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বর্ধমানের ২নং ব্লকের বড়শুল। পাল্টা প্রতিরোধী হামলা চালালো সিপিএমও। তৃণমূল কর্মীদের ছোঁড়া মূর্হূমূর্হূ ইঁটের আঘাতে জখম হয়েছেন কমবেশী প্রায় ১৫জন সিপিএম কর্মী সমর্থক সহ শক্তিগড় থানার ওসি দীপক সরকার সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। সংঘর্ষের সময় কার্যত পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে সিপিএম।

 

অন্যদিকে, সিপিএমের ছোঁড়া ইঁট পাটকেলের আঘাতে জখম হয়েছেন কয়েকজন তৃণমূল কর্মীও। সোমবার এই ঘটনায় সিপিএম মনোনয়ন দাখিল করতে না পেরে ফিরে গেলেও মঙ্গলবার দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করার হুঁশিয়ারী দিয়েছে সিপিএম। এদিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার পুলিশকে জানিয়েই ২টি ম‌্যাটাডোর গাড়িতে বর্ধমান ২নং ব্লকের বড়শুলে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে যান সিপিএমের প্রার্থীরা। কিন্তু ১৯নং জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোড দিয়ে যখন সিপিএম কর্মীদের গাড়ি ঢোকে সেই সময় একটি ট্রাক্টর দিয়ে বড়শুল যাবার মোড়ে রাস্তা আটকে রাখে তৃণমূল কর্মীরা। সেখানে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ সিভিক ভলেণ্টিয়াররাও। সিপিএমের গাড়ি পৌঁছাতেই পুলিশের সামনেই শুরু হয় ব্যাপক ইঁটবৃষ্টি। লাঠি, বাঁশ নিয়ে আচমকা এই হামলায় সিপিএমের গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে একটি দূরত্বে দাঁড়ান সিপিএম কর্মীরা। 



এদিকে, হামলার খবর পেয়ে আরও পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর পাল্টা সিপিএমের পক্ষ থেকেও ইঁট পাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়। পুলিশের সামনেই রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমে পড়ে দুপক্ষই হাতে লাঠিসোটা নিয়ে আস্ফালন শুরু করে। পুলিশ দুপক্ষকেই সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে।


 
সৈয়দ হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ চাইলে এদিন তৃণমূলের জমায়েত হঠাতে পারতো। কিন্তু তা না করে সময় নষ্ট করতেই সিপিএমকে কৌশল করে আটকে রাখে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এদিন যে রাস্তার মোড়ে সিপিএম প্রার্থীদের আটকানো হয়, সেখান থেকে বিডিও অফিস নয়নয় করেও প্রায় ২ কিমি দূরে। পুলিশ এদিন সিপিএম কর্মী, প্রার্থীদের জানান, এই মোড় থেকেই হেঁটে যেতে হবে। 



তিনি অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের দুর্বত্তদের না সরিয়েই সেখান দিয়ে সিপিএম কর্মীদের হেঁটে যাবার নির্দেশ দেয় পুলিশ। যা রীতিমত ন্যক্কারজনক ঘটনা। সৈয়দ হোসেন জানিয়েছেন, এই হামলার ঘটনায় তাঁদের প্রায় ১৫জন আহত হয়েছেন। যাঁর মধ্যে একজনের আঘাত গুরুতর। তিনি জানিয়েছেন, রবিবার খণ্ডঘোষে সিপিএমের পার্টি অফিসে বসে মনোনয়নপত্র পূরণ করার কাজ করার সময় তৃণমূল হামলা চালায়। পার্টি অফিস ভাঙচুর করে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নষ্ট করে। আর তারপরেই বড়শুলে হামলার ঘটনা। তিনি বলেন, তৃণমূল ফের ২০১৮কে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। কিন্তু কোনোমতেই তাঁরা ২০১৮ হতে দেবেন না। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনেই তাঁরা প্রার্থী দেবেন। মঙ্গলবার আরও দ্বিগুণ মানুষকে নিয়ে তাঁরা বড়শুলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাবেন। তৃণমূল ঠেকাতে পারবে না। তিনি জানিয়েছেন, যেখানে যেখানে সিপিএম বাধা পাবে, সেখানেই দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে তাঁরা ঝাঁপাবেন, কিন্তু কোনোমতেই ২০১৮ সালের পুনরাবৃত্তি হতে দেবেন না। 



এদিকে, বড়শুলে তৃণমূলের পরিকল্পিত এই হামলার ঘটনা সম্পর্কে বর্ধমান ২নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পরমেশ্বর কোনার জানিয়েছেন, কারা এই হামলা করেছেন তা তিনি জানেন না। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, সিপিএমই এদিন ইঁট ছোঁড়ে বাইক ভাঙচুর চালায়। উল্লেখ্য, এদিন হামলাকারী তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের প্রত্যেকেরই মুখ কাপড় কিংবা রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিল। 


তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস এই হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। পুলিশই সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে। কারা হামলা করেছে তা পুলিশই বলতে পারবে। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। এদিকে, বর্ধমান ২নং ব্লকে মনোনয়নে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিপিএম সমর্থকরা পালসিট ষ্টেশনের কাছে ১৯নং জাতীয় সড়ক প্রায় আধঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ তোলে।