Addiction to social media : শিশুদের মস্তিষ্ক সঙ্কুচিত হচ্ছে, হতাশার রোগীও বাড়ছে

mobile in hand



রিল-ভিডিও দেখা হোক বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা হোক, সোশ্যাল মিডিয়া আজকের সময়ে আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তথ্য অনুসারে, 13-47 বছর বয়সী লোকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনে গড়ে 3-4 ঘন্টা ব্যয় করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেক ক্ষেত্রে এই অভ্যাসটিকে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মনে করছেন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ক্রমবর্ধমান আসক্তি খুবই মারাত্মক হতে পারে।




কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি শিশুদের মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করছে এবং তাদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং নেতিবাচক আবেগ বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অ্যালকোহল-ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর আসক্তি, সব বয়সের মানুষের জন্যই এর প্রতি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।




শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার একটি স্কুল বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগপত্রে স্কুলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানি পরিকল্পিতভাবে শিশুদের শিকার করেছে। এটি শিশুদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যার কারণে অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।




নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার সিয়াটল পাবলিক স্কুল সোশ্যাল মিডিয়াকে 'মানসিক স্বাস্থ্য সংকট' বলে অভিহিত করে বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শিশুদের মানসিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।




শিশুরা পড়াশোনায় আগ্রহী নয় এবং তাদের আচরণেও অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিশুরা খারাপ আচরণ করে, মনোভাব হঠকারী হয়ে উঠেছে এবং এটি বয়সের সাথে তাদের মানসিক বিকাশকেও প্রভাবিত করছে। এর দায় কে নেবে? শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ-উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার ঘটনাও এ কারণে দ্রুত বাড়ছে।




তার অভিযোগে, স্কুল বলেছে, 2009 থেকে 2019 সালের মধ্যে, হতাশাগ্রস্ত এবং নিরুৎসাহিত বোধ করে এমন শিশুদের সংখ্যা 30 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংস্থাগুলি এমন সামগ্রী সম্প্রচার করে যা বিশেষভাবে শিশুদের কাছে আবেদন করে, যা তাদের দেখার সময় বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু অন্যথায় এটি শিশুদের মধ্যে আসক্তির রূপ নিচ্ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।


স্কুলটির অভিযোগ, শিশুদের মধ্যে দেখা যাওয়া অস্বাভাবিক আচরণগত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের পাঠ্যক্রম সংশোধন করতে হয়েছে, একটি বিষয় হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়ার কুফল রাখা হয়েছে।




পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 69% প্রাপ্তবয়স্ক এবং 81% কিশোর সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে। এসব মানুষের বেশির ভাগ সময়ই কাটে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার কারণে হাসপাতালে উদ্বিগ্ন, দুঃখী বা অসুস্থ বোধ করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। 2015 সালের একটি কমন সেন্স সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কিশোর-কিশোরীরা অনলাইনে অনুসন্ধান করতে দিনে নয় ঘন্টা পর্যন্ত ব্যয় করছে।


কানাডিয়ান গবেষকরা 2017 সালের একটি গবেষণায় দেখেছেন যে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি, বিশেষ করে উদ্বেগ-বিষণ্নতার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মস্তিষ্কও সঙ্কুচিত করছে।


এককথায় শিশুদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি বাড়তে থাকা মদ ও ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর। এতে শুধু মানসিক বিকাশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, এর ফলে কম বয়সেই ডিপ্রেশনের রোগীও বাড়ছে। শিশুদের আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, শিশুদের মধ্যে বিরক্তি-রাগ, মন খারাপ, কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার মতো অভিযোগ বাড়ছে।


এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া/মোবাইল অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেও ঘুমের ক্ষতি হচ্ছে। শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছে না যার কারণে বিষণ্ণতা এবং স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ছে।




বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুরা যাতে সোশ্যাল মিডিয়া/মোবাইলে কম সময় কাটায় তা নিশ্চিত করা প্রত্যেক পিতামাতার জন্য প্রয়োজন। তবে এর জন্য অভিভাবককে আগে নিজের অভ্যাস উন্নত করতে হবে। মোবাইল যেন আসক্তিতে পরিণত না হয় সেদিকে সব বয়সের মানুষকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।