হিমালয়ের বরফের মধ্য থেকে এক বৃদ্ধর জীবন বাঁচালেন তিন পর্বতারোহী
রূপনারায়নপুরের তিনজন পর্বতারোহী নিজের জীবন বিপন্ন করে দমদমের বাসিন্দা ৭২বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে বাঁচিয়ে ফেরালেন। যারা এই কাজ করেছেন তারা হলেন চিন্ময় মিশ্র(সাজু),কৌশিক মন্ডল ও বিপ্লব মন্ডল। তাদের নেশা বিভিন্ন পাহাড় পর্বত ঘুরে বেড়ানো আর সেই ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা এক নতুন আনন্দ তারা পেলেন বরফের হিমালয়ের উচ্চতা থেকে এক অসুস্থ বৃদ্ধকে তার বাড়ি পৌঁছাতে পেরে।
অসুস্থ ৭২ বছরের বয়সী অমল কুমার দাসকে দমদমের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করে,তারপর তারা সকলে ১৮ জুন সকালে নিজেদের বাড়ি ফিরেছেন। তবে সাজু ও তার সঙ্গীরা ওই বৃদ্ধের প্রতি যদি সহমর্মিতা না দেখাত তাহলে হয়তো হিমালয়ের বরফে কোথাও হারিয়ে যেতেন তিনি।
রূপনারায়ণপুরের ফিরে সাজু বলেন তারা প্রায় কুড়ি হাজার ফুট উচ্চতার দুর্গম কালিন্দী পাস অভিযানে গঙ্গোত্রী পৌঁছান ১ জুন । অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রা অতিক্রম করার জন্য তারা একটি এজেন্সির সহযোগিতা নেন। তখন দেখেন বৃদ্ধ অমল বাবুও একাই যাত্রা অতিক্রম করার জন্য এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন । শুরুতেই পর্বতারোহণে অত্যন্ত অভিজ্ঞ সাজুর মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু অমল বাবু তাদের সাথে ২ তারিখ থেকে হাঁটা শুরু করেন। একে একে তারা ভুজবাস,নন্দনবন, বাসুকি তাল,খাড়া পাথর, শ্বেতা গ্লেসিয়ার,কালিন্দী বেস অতিক্রম করে ৮ জুন অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছান।
কিন্তু যাত্রা প্রতিক্রম করে বিপরীত দিকে নামার সময় রাজপাড়া ও আড়োয়াতাল আসার পরই শরীর খারাপ হতে থাকে অমলবাবুর। এদিকে অত্যধিক বরফের কারণে এজেন্সির ৩ সহযোগীর শরীর এতটাই খারাপ হয় যে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতে হয়েছিল আগেই। এই অবস্থায় গাইড বিষ্ণু সোনেয়াল তাদের এক মাত্র ভরসা ছিলেন। এদিকে অমলবাবুর শরীর প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে। বরফের মধ্যেই অবধারিত মৃত্যুর অপেক্ষা করছিলেন ওই বৃদ্ধ । কিন্তু চোখের সামনে একজন অভিযাত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন এটা কথা মেনে নিতে পারেননি সাজু ও তার সহ যাত্রী দুজন। তারাই শেষ পর্যন্ত অমলবাবুকে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে, নিজেদের জ্যাকেট পরিয়ে দীর্ঘ রাস্তা বরফের উপর দড়ি বেঁধে টেনে নিচে নামিয়ে আনতে থাকেন । এবং নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে তারা আইটিবিপি ক্যাম্পে খবর দেওয়ার জন্য ছুটে যান।
শেষ পর্যন্ত অচৈতন্য অমলবাবুকে সাজুদের সহযোগিতায় আইটিবিপি জওয়ানেরা স্ট্রেচারে করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যান । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন । এরপর সাজু ও তার সঙ্গীরা অমল বাবুকে নিয়ে চলে আসেন হরিদ্বারে। সেখান থেকে হাওড়ার টিকিট কেটে ট্রেনে চাপিয়ে দেন। নিজেরা ফিরে আসেন রূপনারায়নপুরে।
ঘরে ফিরে অমলবাবু বললেন ওই তিনজন দেবদূত না থাকলে বেঘোরে হিমালয়ের কোলে তার জীবন হারিয়ে যেত । আর সাজু বলছেন এরকম পাহাড়ে হতেই পারে। যেমনটা হয়েছিল ২০১৭ সালে। সেবার মনিরাং থেকে কলকাতার বেকনের সদস্য সুদীপ রায়কে এই ভাবেই তিনি রেস্কিউ করেছিলেন। তবে কঠিনতম এই পাস অতিক্রম করে সাজু ও তার সঙ্গীরা যে আনন্দ পেয়েছেন তার থেকেও অনেক গুণ বেশি আনন্দ পেয়েছেন একটি মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিতে পেরে ।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊