প্রশাসনিক আধিকারিকদের হুঁশিয়ারী মমতার, কাজ না করলে FIR করুন: মমতা বন্দোপাধ‍্যায়

প্রশাসনিক আধিকারিকদের হুঁশিয়ারী মমতার, কাজ না করলে FIR করুন

Cm, mamata



সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান:

বর্ধমানের সভা থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের হুঁশিয়ারী মমতার, কাজ না করলে এফআইআর করুন

পুরুলিয়ার পর এবার বর্ধমানের সভা থেকে সরকারী আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারী দিয়ে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সোমবার বর্ধমানের গোদা বালির মাঠ এলাকায় কৃষকদের সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অভিযোগ আসছে, চাষীরা কিষাণ মাণ্ডিতে ধান বিক্রি করতে গেলে তাঁদের নানাভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 




এদিন চাষীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি এটা কেউ করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিডিওদের জানান, একইসঙ্গে থানায় এফআইআর করুন। এরপরই মুখ‌্যমন্ত্রীর হুংকার, সঙ্গে সঙ্গে এ্যাকশন নিতে হবে। আমি বলে যাচ্ছি। যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা দায়িত্ব পালন না করলে ক্ষমতায় থাকার দরকার নেই। 



এদিন পঞ্চায়েত প্রধানদের উদ্দেশ্যেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েতগুলো আরও সজাগ হোন। এগ্রি মার্কেটিং-এর কেউ কাজ না করলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর এ্যাকশন নিন। তিনি বলেন, বাঁকুড়ায় এরকম একটা কেস হয়েছে। সোমবার বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রীর এই সভাকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই ছিল টানটান উত্তেজনা। গোদা বালির মাঠে দুপুর প্রায় ২ টো ২০ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী আসেন সড়ক পথে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এদিন বালির মাঠে হেলিপ্যাড তৈরী করা হয়েছিল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি সচেতনভাবেই হেলিকপ্টারে না এসে গাড়িতে এসেছেন। 



এদিন এই মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন,বর্ধমানে একটি স্থায়ী হেলিপ‌্যাডের প্রয়োজন ছিল। এই হেলিপ্যাড সেই স্থায়ী হেলিপ্যাড। যে জায়গায় এটা করা হয়েছে, সেটি সরকারী জায়গা। তিনি এদিন এই হেলিপ্যাডের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পূর্ত দপ্তরকে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে যান। 



মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই স্থায়ী হেলিপ্যাড হওয়ায় বর্ধমানে আসা এবং বর্ধমান থেকে অন্যান্য জেলায় দ্রুত যাতায়াত করার সুবিধা হবে। উল্লেখ্য, সোমবার গোদার এই মাঠ থেকে মুখ্যমন্ত্রী কৃষকবন্ধু (নতুন) প্রকল্পের খরিফ মরশুমের আর্থিক সহায়তা প্রদানের শুভারম্ভ করেন। এদিনই ৭৯ লক্ষ রাজ্যের কৃষকদের একাউণ্টে সরাসরি ২৩৮৫ কোটি টাকা দেওয়া শুরু হল। এছাড়াও এই মঞ্চ থেকে মোট ২২জনকে কৃষকবন্ধু, কৃষকদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, কৃষি যন্ত্রপাতি, বাংলার কৃষি সেচ প্রকল্পে সুবিধা প্রদান করেন তিনি। এদিন এই মঞ্চে হাজির ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পূর্ত ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, মুখ্যসচীব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সহ রাজ্যের বেশ কয়েকজন সচীব, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা, জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন প্রমুখরাও। 



অন্য একটি মঞ্চে হাজির ছিলেন জেলার বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য, পুরসভার প্রতিনিধিরাও। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য সরকারের কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থে যে সমস্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করা হয়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন দফায় দফায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের সতর্ক করে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে চিকিত্সা না করালে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর করুন। জেলাশাসক বলছি, দ্রুত এ্যাকশন নিন। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যস্তরে জানান। 



মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুনছি হার্ট, লিভার, কিডনির চিকিত্সা করাতে বেশি আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। সেখানে টাকা বেশি বলে? পুলিশকে বলছি এ্যাকশন নিতে হবে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন একহাত নিয়েছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেও। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার ১০০ দিনের টাকা দিচ্ছে না। বিজেপির কৃষক বিরোধী মনোভাব। পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখেই তিনি এদিন আওয়াজ তোলেন, ১০০ দিনের টাকা দাও, নাহলে বিজেপি বিদায় নাও। তিনি বলেন, প্রতিবছর রাজ্যে ২৫৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উত্পাদন হলেও কেন্দ্র সরকার ১ লক্ষ মেট্রিক টনও ধান কেনেনি। অথচ ধান উত্পাদনে কম এমন অনেক রাজ্য থেকে কেন্দ্র ধান কিনছে। এদিন কর্মবীর নিয়েও ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৪ মাসের ট্রেনিং দিয়ে ৪ বছরের চাকরী। বাকি জীবন ছেলেমেয়েরা কি করবে ললিপপ খাবে? 



বাংলা আবাস যোজনায় কেন্দ্র সরকারের নামকরণ নিয়েও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অন্যান্য রাজ্যে বাড়ির নামকরণ সেই রাজ্যের নামেই হচ্ছে। অথচ বাংলায় হলেই তাতে বাধা। বাংলা আবাস যোজনার টাকাও আটকে দিয়েছে ওরা। তিনি বলেন,নির্বাচনের সময় এসে মানুষে মানুষে ভাগাভাগি, দাঙ্গা করবে - এসব চলবে না। ভোটের আগে বিনা পয়সায় উজালা গ্যাস দিয়ে একজন এমপি তো পালিয়েই গেল। তিনি কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যা ইচ্ছা তাই করছে। যে সত্যি কথা বলছে তার বিরুদ্ধেই ইডি, সিবিআই। আজও শিবসেনার এক নেতার ইডি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ ভয়ে ভয়ে রয়েছে। কয়েকলক্ষ লোক দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ভিসা পাসপোর্ট দেখলেই তা বোঝা যাবে। কেন মানুষ নির্ভয়ে থাকতে পারবে না? 




এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আশা ও আইসিডিএস কর্মীদের ৮ হাজার টাকা দামের ফোন দেওয়া হবে। খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকার জব ফেয়ার করে প্রায় ৩০ হাজার চাকরীর ব্যবস্থা করবে। দেউচা পাঁচামি কয়লাখনি চালু হলে লক্ষাধিক চাকরী হবে বীরভূম ও বর্ধমান জেলার ছেলেমেয়েদের। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরী হচ্ছে, সেখানেও লক্ষাধিক চাকরী হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ