আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগীতায় স্বর্নপদক পুলিশকর্মীর
অভীক মিত্র - আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগীতায় স্বর্ণ পদক পেলেন বীরভূম জেলা পুলিশের এক কর্মী । হুগলি জেলার তারকেশ্বরের বাসিন্দা কৌশভ সান্যাল বর্তমানে চাকরিসূত্রে বীরভূমের বাসিন্দা ।
পয়লা এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল নেপালের পোখরায় আয়োজিত ইন্দো-নেপাল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতার মঞ্চে যোগ দিতে বীরভূম থেকে রওনা দেন । তবে তিনি একা নন তাঁর সাথে তাঁর তিন ছাত্রী পারমিতা দত্তরায়, প্রিয়াঙ্কা মূর্মূ এবং হুগলি জেলার বাসিন্দা জাহ্নবী বিশ্বাস এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেন ।
বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন বাসিন্দা পারমিতা দত্তরায় ৫৫ - ৬০ কেজি বডিওয়েটে খেলে সোনা জিতে নেন । নেপালের তিন প্রতিযোগীকে হারিয়ে কাতা ও কুমিতে দুই ইভেন্টেই স্বর্ণপদক জিতে নেন তিনি ।
একইসাথে ষাট থেকে পঁয়ষট্টি গ্রুপে কাতা ও কুমিতে ইভেন্টে সিলভার পদক জেতেন প্রিয়াঙ্কা ও জাহ্নবী । পোখরা রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে এই আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগীতার আয়োজন করে নেপালের ইউথ স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট ফোরাম ।
নেপাল ও ভারতের প্রায় তিন শতাধিক ক্যারাটেকা এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করেন । ক্যারাটে ছাড়াও তাইকান্ডু,লাঠি,কিক বক্সিং, রেসলিং,একশো মিটার দৌড়, জুডো ইত্যাদি একাধিক ইভেন্ট রাখা হয়েছিল ।
রাজ্য পুলিশের কর্মী তথা ক্যারাটে প্রশিক্ষক কৌশভ সান্যাল ষাট থেকে পঁয়ষট্টি কেজি পুরুষ বিভাগে খেলে স্বর্ণপদক জিতে নেন । রাজ্য পুলিশে চাকরি করার সাথে সাথেই তিনি ক্যারাটে সম্প্রসারনের জন্য বীরভূম জেলার ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন ।
২০১৯ সালে গুয়াহাটিতে আয়োজিত জাতীয় স্তরের প্রতিযোগীতায় স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছিলেন তিনি ।
কৌশকবাবু বলেন, "দীর্ঘ ছাব্বিশ ধরে ক্যারাটে প্রশিক্ষন দিচ্ছেন । একাধিক জাতীয় স্তরের প্রতিযোগীতায় সফলতা অর্জন করলেও টাকার অভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলতে পারেন নি ।"
তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলার স্বপ্ন দেখতে ভুলে যান নি এই প্রশিক্ষক। তাই চাকরির পাশাপাশি নিজেকে তৈরি করে গেছেন প্রত্যেকদিন যদি কোনোদিন সুযোগ আসে তার জন্য । সুযোগ যখন এল তখন তাঁর বয়স চল্লিশের কোঠায় ।
এই বয়সে এসে বেশীরভাগ প্রশিক্ষকরা যখন খেলার কথা ভাবতেই ভুলে যান তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাপিয়ে খেলে পদক জিতে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন বয়সটা সত্যিই একটা সংখ্যা মাত্র ।
একইসাথে পারমিতা দত্তরায় তাঁর ছয়মাসের শিশুকন্যাকে সামলে প্রথম ক্যারাটেয় ভর্তি হয়ে চার বছরের মধ্যে রাজ্য,জাতীয় স্তরের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেও জিতে নিয়েছেন স্বর্ণপদক । হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা জাহ্নবী বিশ্বাস তাঁর দশবছরের মেয়েকে সাথে নিয়েই যোগ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতার মঞ্চে । সন্তান এবং সংসার সামলেও যে স্বপ্নকে সার্থক করা যায় তা এই দুই বঙ্গ নারী প্রমাণ করেছেন ।
বোলপুরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা মূর্মূ সুদূর শিলিগুড়ির একটি বিটেক কলেজে পড়াশোনা করেন । নিজের পড়াশোনা সামলেও শিলিগুড়ি থেকে বোলপুরে এসে ক্যারাটে ক্লাশ করে যেতেন । খেলাধূলা করলে নাম্বার কম আসে এই ধারোনার মূলে কষাঘাত করে প্রিয়াঙ্কাও আজ সিলভার পদকের অধিকারী । বাংলা থেকে কৌশভবাবু সহ চারজন এই প্রতিযোগী এই প্রতিযোগীতা থেকে পদক জিতে বাংলার সম্মান বাড়িয়েছেন । ভারত ও নেপালের জাতীয় সংগীত এবং নেপালের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। একাধিক সংস্থা তাঁদের সম্মান জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊