দীপাবলির রেশ কাটতে না কাটতেই পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শিল্পাঞ্চল মেতে উঠল ছটপুজোর আনন্দে
রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী: আসানসোল:- দুর্গাপুজো, কালীপুজো, দীপাবলির রেশ কাটতে না কাটতেই পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শিল্পাঞ্চল মেতে উঠল ছটপুজোর আনন্দে। উৎসবের মরশুম প্রায় শেষ হয়ে এসেছে ৷ তাই একেবারে মুখভার ছিল বাঙালীর ৷ আর ছটপুজো অনেকটাই আনন্দ দিল বাঙালী অবাঙ্গালী সবাইকে ৷
আজ পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শিল্পাঞ্চলের দামোদর ঘাট, কাল্লা প্রভুঘাট সহ বহু জায়গায় ছটপূজো অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গুরুনানাক পল্লি ইসমাইল আসানসোলের ৮৫ নাম্বার ওয়ার্ডের পক্ষ থেকেও মাশিপুকুরেও করা হলো ছটপূজো। এখানে নিজেদের এলাকা ছাড়াও বাইরে থেকেও পূর্নাথীরা আসেন পূজো করতে।
প্রতিবছরই হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই লৌকিক উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে ৷ বহু প্রাচীন কাল থেকেই পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে পার্বন হিসেবে উদযাপিত হয় ৷
ছট পুজো মূলত হিন্দিভাষীদের উৎসব হলেও কালক্রমে তা পৃথিবীর বহু সম্প্রদায়ের মাঝে ছড়িয়ে গেছে ৷ বাংলায় হিন্দিভাষীদের মাধ্যমে এই উৎসবের সূত্রপাত ৷ এই পুজো মূলত সূর্য ও তার পত্নী ঊষার প্রতি সমর্পিত হয়ে থাকে ৷ সূর্যপত্নী ছোটী মাঈ নামেও পরিচিত ৷ সূর্য ও ছোটী মাঈ যাতে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত অনবরত রাখেন তার জন্য আশীর্বাদ কামনা করা হয়। ছটপুজো এক ধরনের ব্রত। মূলত সধবা মহিলারা এই ব্রত পালন করে থাকেন। কিন্তু পুরুষরাও যে করেনা সেটা নয়। ভগবানকে তো যে কেউ ডাকতেই পারে। পুরুষ মহিলা বলে কিছু নেই। ঈশ্বর কৃপাময়ী। আর সেই কৃপা পাওয়ার জন্য এই ব্রত পালন। দুর্গাপুজোর মতো তিথি মেনে হয় পুজোপাঠ। চতুর্থী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলে এই ব্রত।
৮ নভেম্বর সোমবার শুরু হয়েছে উৎসব। আজ ছিল ষষ্ঠী। (শুরুর দিন অর্থাৎ সোমবার)এদিন ‘নাহানখানা’র দিনে সারাদিন উপোস করে রাতে লাউভাত খাওয়া হয়। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার উপোস করে দুধ-গুড় দিয়ে তৈরি আতপ চালের ভাত বা ক্ষীর-রুটি অর্থাৎ ‘খড়না’ খাওয়ার রীতি মানা হয়। আজ বুধবার সারাদিন উপোস করে বিকেলে সূর্যাস্তের সময় নদী, পুকুর বা জলাশয়ের ধারে সূর্যদেবতাকে অর্ঘ্য নিবেদন করবেন পুর্ণার্থীরা। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালেও সূর্যোদয়ের আগে নদী বা পুকুরের ঘাটে পৌঁছে যাবেন তাঁরা। সূর্যোদয়ের সময় ফের সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করে উপোস ভঙ্গ করবেন তাঁরা। পুজোর নৈবেদ্যের বা প্রসাদ হিসেবে অন্যতম প্রধান উপাদান ঠেকুয়া। তাছাড়া নানারকম ফলমূল যেমন কলার কাঁদি, আখ, লেবু, পানিফল, মুলো সহ নানা ধরণের ফল ও সবজি লাগে।
কিন্তু এবারেও করোনার কারণে সেইভাবে বহিরাগত তেমন কেউ আসেনি। কিন্তু পূজো হয়েছে সঠিক নিয়ম মেনে। যদিও সঠিক ভাবে সামাজিক দুরত্ববিধি মানা হয়নি, বেশিরভাগ মানুষের মুখেও দেখা যায়নি মাস্ক। মহামারী করোনা কে ভুলে প্রতিবছরের মতো এবারও মেতে উঠল ছটপুজোতে।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন নদীঘাটে ও জ্বলাধারে ছটপুজোর নানান চিত্র তুলে ধরা হলো।ছোট পূজো বতীদের এদিন নদীঘাট ও জ্বলাধারে ছটপূজো করতে দেখা গেলো নিয়ম মেনে,বিভিন্ন ছট ঘাট গুলোকে সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে ছোটপুজোর উপলক্ষে।একই সাথে করোনা বিধি মেনেই চলছে ছটপুজো।
সেইরকমই আজ এক দৃশ্য দেখা গেলো আসানসোলের কাল্লার প্রভু ছটঘাটে।যেখানে উপস্থিত ছিলেন আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং আসানসোল পৌরনিগমের প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। এই উপলক্ষে বহু ছট ব্রতীরা ছটঘাটে উপস্থিত ছিলেন।পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছট ব্রতীদের সুবিধার জন্য সমস্ত রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কাল্লা মোড়ে ছটপূজো পরিদর্শন করলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। ছট পুজো কমিটির তরফে লি ক্লাবের সম্পাদক কৃষ্ণা প্রসাদ মন্ত্রী মলয় ঘটককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এদিন মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন,আমরা চাইবো ছট মায়ের কাছে এই প্রার্থনা করবো,ছট মা আমাদের যেনো আশীর্বাদ দেয়। যেনো সবাইকে সুস্থ সবল রাখে বলে জানান তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊