মহাত্মা গান্ধি জীবনে শুধুমাত্র দুটিই সিনেমা দেখেছিলেন- জানেন কি? 

গান্ধীজী



শবরী চক্রবর্তী, সংবাদ একলব্যঃ 
বিনোদনের জন্য? না। এবং এটাও বিশ্বাস করেননি যে, জানলা-দরজাহীন অন্ধকার বন্ধ একটা ঘরে বসে সিনেমা দেখলে নীতিশিক্ষা পাওয়া যায়। সংবাদপত্রে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের গ্ল্যামারাস ছবি ছাপানোটারও সমালোচনা করেছিলেন। তাহলে কীভাবে সম্ভব হল এই বিরল ঘটনার বাস্তবায়ন?

গান্ধি জীবনে দুটি ছবি দেখেছিলেন। প্রথম, ‘মিশন টু মস্কো’। ঘটনা ১৯৪৩ সালের। তাঁর সঙ্গিনী মীরাবেন তাঁকে এই ছবি দেখতে রাজি করান। ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় শিল্পপতি শান্তি মোরারজির বইয়ে। তখন গান্ধি আগা খান জেল থেকে বেরিয়ে নরোত্তম মোরারজির বাংলোর বাইরের দিকের একটি ঘরে আছেন। ছবিটি রাশিয়ার আমেরিকান অ্যাম্বাসাডর জোসেফ ডেভিসের জীবনকাহিনী, তবু কয়েকটি দৃশ্যে নগ্ন নাচ দেখানো হয়। গান্ধি এমন একটি ছবি তাঁকে দেখানোর জন্য সংগঠকদের ওপর রেগেই গিয়েছিলেন।

এরপর বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক কানু দেশাই গান্ধিকে ‘রামরাজ্য’ ছবিটি দেখতে রাজি করান। তিনিও রাজি হন কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একটি ভারতীয় ছবি দেখতে চাই, ইংরিজি ছবি দেখে খুব ভুল করেছি।’ ‘রামরাজ্য’-এ শোভনা সমর্থ হয়েছিলেন সীতা ও প্রেম আদিব হয়েছিলেন রাম। শান্তি লিখেছেন ‘রামরাজ্য’ গান্ধির ভালো লাগেনি। কারণ ছবির অতি উচ্চ শব্দ সংযোজন। শান্তির মতে, এটি সম্পূর্ণ রটনা যে গান্ধি দেড় ঘণ্টার জন্য দেখতে গিয়েও পুরো ছবি দেখেন কারণ তাঁর ছবিটি ভালো লেগেছিল।

আসা যাক গান্ধির ‘রামরাজ্য’ দেখার অন্য বিবরণে- 

১৯৩৯-এ পরিচালক বিজয় ভাট, যিনি পরিচালক বিক্রম ভাটের দাদু, তাঁর সঙ্গে গান্ধির প্রথম দেখা হয়। গান্ধি তাঁকে গুজরাটের বিশিষ্ট কবি নারসি মেহেতার ওপর ছবি করতে বলেন। বিজয় করলেন। ছবি হিটও হল কিন্তু গান্ধি ছবিটি দেখলেন না বলে বিজয়ের আক্ষেপ রয়ে গেল। তিনি জানতেন না এরপর তাঁর জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটবে যা তাঁকে ইতিহাসে জায়াগা দিয়ে দেবে চিরকালের মতো। ১৯৪৪ সালে গান্ধি দেখলেন ‘মিশন টু মস্কো’। খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হল। তখন চিত্রগ্রাহক কানু দেশাই তাঁকে রামরাজ্য দেখতে বলেন। এর পিছনে আর একটি কারণ, ছবির বিষয় রামায়ণ যা গান্ধির খুবই পছন্দের। সেইমত, ১৯৪৪-এর বারোই জুন ছবি প্রদর্শিত হয়। তিনি ৪০ মিনিট ছবিটি দেখেছিলেন কিন্তু জাহ্নবী ভাট, বিজয় ভাটের নাতনি বলেছেন, তিনি ৯০ মিনিট মানে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ছবিটি দেখেন। ছবি দেখে তিনি বিজয়ের পিঠ চাপড়ে দেন কারণ সেই সময় তিনি মৌনব্রত অবলম্বন করেছিলেন।

তবে মহাত্মা অন্য পারফর্মিং আর্টের সমঝদার ছিলে। তিনি ভজন শুনতে খুব ভালোবাসতেন। ১৯৪৭ সালে দাঙ্গা কবলিত কলকাতায় এসেছিলেন মহাত্মা। তখন কলকাতার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী যূথিকা রায় গান্ধিকে ভজন শোনানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অত ব্যস্ততার মধ্যে গান শোনার সময় বার করা অসম্ভব। সরোজিনী নাইডু যূথিকাকে বলেন, বাপু চানের সময় তাঁর গান বাথরুম থেকে শুনে নেবেন। তেমনই হল। যূথিকার গান তাঁর খুব ভালো লেগেছিল। আর এক শিল্পী, জগমোহন সুরসাগরকে গান্ধি বাচ্চাদের জন্য সপ্তকাণ্ড রামায়ণ গাইতে বলেন। জগমোহন তাইই করেছিলেন।

বেঁচে থাকতেই তিনি সিনেমার নায়কও হয়েছিলেন। ১৯৪০-এ মাদ্রাজের ডকুমেন্টারি ফিলমস লিমিটেডের এ.কে. ছেট্টিয়ার তাঁকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিলম বানিয়েছিলেন তামিল তেলুগু ও হিন্দুস্তানি ভাষায়। দ্বিতীয় বিশ্বষুদ্ধ শুরু না হলে এই ছবি বিশ্বের কমবেশি ২১ টি ভাষায় দেখানো হত, ছেট্টিয়ার বলেছিলেন।

সিনেমা এত অপছন্দ ছিল, কিন্তু আজ মহাত্মা গান্ধি যদি দেখতেন তাঁকে নিয়ে কত সিনেমা হচ্ছে, অবাক হয়ে যেতেন না রাগ করতেন?