২৬ সেপ্টেম্বর পালন হোক বাংলার জাতীয় শিক্ষক দিবস-  দাবী জানালো বাংলা পক্ষ

Vidyasagar's birth anniversary as Teacher's Day



উনিশ শতকের বাংলার মানুষরা যে সময় ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সে সময় সমাজের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে প্রবল যুক্তিবাদে যিনি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে নস্যাৎ করে মানবধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপাত করেছিলেন, তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আজ তার জন্মদিন। ২০০ বছর অতিক্রম করেও তিনি আজও বড্ড প্রাসঙ্গিক।

২৬শে সেপ্টেম্বরই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। সেই দিনটিকেই 'বাংলার জাতীয় শিক্ষক দিবস' ঘোষণার দাবি জানিয়ে বড় পদক্ষেপ নিল বাংলা পক্ষ। প্রসঙ্গত, ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর জন্মবার্ষিকী ৫ই সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। এবার সেই ৫ই সেপ্টেম্বর নয়, বরং বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের দিনই শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হোক আওয়াজ উঠছে বাংলায়। এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এমনটা আবেদন জানিয়েছে বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলের সিংহভাগই। বাঙালির বিভিন্ন দাবিদাওয়া এবং অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে বাংলা পক্ষ (Bangla Pokkho)। এই সংগঠনের উদ্যোগেই বুদ্ধিজীবীদের সাক্ষর সহ স্মারকলিপি মুখ্যমন্ত্রী দফতরে পাঠিয়েছে সংস্থা।


স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে- "বাংলার চিন্তাশীলতার পরিসরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি কেবল নবজাগরণের একজন কাণ্ডারীই নন, বরং গোটা ভারতবর্ষে চিন্তন এবং মননের পরিসরে আধুনিকতার পথপ্রদর্শক। আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের যে, আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী। তিনি আক্ষরিক অর্থেই আমাদের জাতির শিক্ষক, কারণ আজও বাঙালির ঘরের সন্তানরা তাঁর বর্ণপরিচয়ের মাধ্যমে অক্ষর জ্ঞান লাভ করে। আমাদের শিক্ষার যে মূল ভিত্তি তার অনেকাংশেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সদা জাগ্রত। নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর ভূমিকা আন্তঃরাষ্ট্রীয় স্তরে স্বীকৃতির দাবি রাখে।


আশ্চর্যের বিষয় বাংলা তথা গোটা ভারত রাষ্ট্র এই মহাপুরুষের যথেষ্ট মূল্যায়ন এবং সম্মান এখনো করতে পারেনি। যে সময় হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ভারত রাষ্ট্র তথা বাংলাকে অন্ধকারে ঢেকে ফেলতে চাইছে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে আরও দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, তাঁর চেতনা, তাঁর দর্শনের সঙ্গে জাতির সম্পৃক্ততা আরও বিস্তার করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এই অন্ধকারের আবহে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেই আলোকবর্তিকা যা বাঙালি জাতিকে প্রতিরোধের অনুপ্রেরণা জোগাবে। এই বিষয়টিকে অনুধাবন করে আপনার কাছে বাংলা পক্ষর আন্তরিক আবেদন যে,
১) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন অর্থাৎ ২৬শে সেপ্টেম্বর দিনটিকে "বাংলার জাতীয় শিক্ষক দিবস" হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
২) বাংলার জনপ্রতিনিধিরা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে দাবি উত্থাপন করুন যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন "রাষ্ট্রীয় শিক্ষক দিবস" হিসেবে যেন ঘোষণা করা হয়।
আমাদের বিশ্বাস এই দুই পদক্ষেপ যদি গ্রহণ করা হয়, ভারত রাষ্ট্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচিতি কেবল বাড়বে না বরং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বাংলার বুকে জন্মানো এই মহাপুরুষের মূল্যায়ন আরও অনেক বাড়বে। বাংলা তথা ভারতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন।"


এই স্মারকলিপিতে রাজ্যের প্রথমসারির বিখ্যাত মানুষজন সমর্থন জানিয়ে সই করেছেন। যেমন-
১। জয় গোস্বামী, কবি
২। পবিত্র সরকার, শিক্ষাবিদ
৩। জয়া মিত্র, পরিবেশ কর্মী ও লেখিকা
৪। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, পুরাণবিদ
৫। তপোধীর ভট্টাচার্য, প্রাক্তন উপাচার্য, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়
৬। সবুজকলি সেন, প্রাক্তন উপাচার্য, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
৭। সৃজিত মুখার্জী, চিত্র পরিচালক
৮। রূপম ইসলাম, সঙ্গীতশিল্পী
৯। সুবোধ সরকার, কবি
১০। রূপঙ্কর বাগচী, সঙ্গীতশিল্পী - আরও অনেকে।