না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক উত্পল মুখোপাধ্যায় 
Utpal Mukherjee



রঞ্জিত ঘোষ, বাঁকুড়া,4 জুলাই


সাহিত্য আমাদের বাঁচতে শেখায়, সময় সরণির উত্থান-পতনে সাহিত্য আমাদের ভাষা দিয়ে, প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে সন্মুখ সমরে জাগায় আশার বাণী ।সাহিত্যাকাশের উজ্বল নক্ষত্রগুলি আমাদের প্রেরণা দেয় পথ চলার । আর সেই নক্ষত্র গুলির মধ্যে দীর্ঘ চার দশক ধরে প্রজ্বলিত থাকা এক নক্ষত্র খসে পড়ল শনিবার । অর্থাত বাঁকুড়া জেলার সাহিত্য আঙিনার বিশিষ্ট সাহিত্যিক উত্পল মুখোপাধ্যায়ের (Utpal Mukherjee) ঘটল জীবনাবসান । তাঁর মৃত্যুকালীন বয়স হয়েছিল 69বছর। 


বিশিষ্ট সাহিত্যিক উঁত্পল বাবুর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে 'স্টোক' হয়, তার পর রানীগঞ্জের একটি হসপিটালে তাকে ভর্তি করা হলেও তার শরীরের ডানদিক অসার হয়ে যায়। সে যাত্রা রেহাই পেলেও তার পর থেকে মাসছয়েক পেরোতে না পেরোতেই 3 জুলাই শনিবার দুপুর দেড়'টা নাগাদ জীবন যুদ্ধে হার মানেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক উঁত্পল মুখোপাধ্যায়। তাঁর এই অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাঁকুড়া জেলাসহ রাজ্যের গোটা সাহিত্য মহল । তাঁর গ্রামের বাড়ি, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে প্রয়াত উঁত্পল বাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বাঁকুড়া নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলনের এবং বাঁকুড়া লোকসংস্কৃতি একাডেমীর সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন সাংঠন ও জেলার সাহিত্য অনুরাগীরা ।



একাধারে কবি-সাহিত্যিক,নাট্যকার কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন উত্পল মুখোপাধ্যায় 11 মার্চ 1952 সালে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে জন্মগ্রহণ করেন । তারপর প্রথাগত লেখাপাড়ার পাশাপাশি মনোনিবেশ করেন সাহিত্য চর্চায় । ধীরে ধীরে তার দৃপ্তিময় কলমে ফুটে উঠল 12টি কাব্যগ্রন্থ । তাঁর একের পর এক লেখা মন কাড়তে শুরু করল সাহিত্যানুরাগীদের। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রত্ন বস্তুর খোঁজে' এবং তাঁর লেখা শেষ কাব্যগ্রন্থ হল 'মুহূর্তের কণ্ঠস্বর' যা তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে প্রকাশিত হয় । এ ছাড়াও তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'হৃদয়ে নরম মাটি' , 'কপোত গল্পের মেঘ' ,'নীল আলো নির্জন দীপ ঘর', 'সাঁজ বাতির আলো', 'অনিকেত সন্ধ্যায় একা' ইত্যাদি ।এছাড়াও তিনি অংশ নেন আরো 24টি কাব্য গ্রন্থ প্রকাশে । 


তার কলমের দৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ে জেলা রাজ্য-দেশ ছড়িয়ে বাংলাদেশেও। বাংলার লোকসংস্কৃতি বিষয়ক গ্রন্থ 'রাঢ় সংস্কৃতির চাল চিত্র' যার জন্য তার ঝুলিতে রয়েছে প্রায় তিন'শ টিরও বেশি পুরস্কার।এছাড়াও বাঁকুড়া অনুশীলন সমিতির থেকে 'অনুশীলন' পুরষ্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে । মৃত্যুর বছর চারেক আগে থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলনের বাঁকুড়া শাখার সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি । 


পাশাপাশি বাঁকুড়া লোক সংস্কৃতি একাডেমীর সাংস্কৃতিক সচিব হিসেবেও কিছু সময় অতিবাহিত করেন তিনি । নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলনের মুখ্য কার্যালয় দিল্লী থেকেও পুরস্কার জমা হয়েছে তাঁর ঝুলিতে ।দেশ-বিদেশ মিলিয়ে তিনি প্রায় 450থেকে 500পত্র-পত্রিকার সংগে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক উঁত্পল বাবু । পাশাপাশি বেশ কিছু পত্র-পত্রিকার সম্পাদনার দায় ভারও বহন করেছেন তিনি ।


মেয়েদের বিবাহের পর এবং পত্নী বিয়োগের পরও সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরেই কেটেছিল তার জীববনের একাকীত্ব ।দীর্ঘ চার দশক ধরে সাহিত্যাকাশে উজ্বল নক্ষত্রটির পতন ঘটলেও বাংলা সাহিত্য জগতে রেখে গেলেন আপন সাহিত্যকীর্তি।যা হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের সাহিত্যানুরাগীদের মননে স্থান করে নেবে ,মানবকে সাহিত্য রসে ভরিয়ে তুলবে ।