একটা দুটো নয় চার চারটে রেকর্ড কাদম্বিনীর- Google জানালো শ্রদ্ধা

https://g.co/doodle/msak25e



যে বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মেছিলেন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জন্মেছিলেন, সেই বছরেই তিনিও জন্মেছিলেন। তার নাম — ডাঃ কাদম্বিনী গাঙ্গুলি। বিয়ের আগে তার পদবি ছিল বসু। ১৮৬১সালের ১৮ই জুলাই ভাগলপুর শহরে জন্মেছিলেন কাদম্বিনী (Kadambini Ganguly)।


বাবা ব্রজকিশোর বসু ভাগলপুর স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম।নারীশিক্ষায় উৎসাহী ব্রজকিশোরবাবু নারীশিক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ কলকাতার আরেক ব্রাহ্মসমাজের সদস্য দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনীকে পাঠান বালিগঞ্জের হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। স্কুলটি পরে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশে যায়। এই স্কুলটিও ১৮৭৮সালে বেথুন স্কুলের সঙ্গে মিশে যায়। এশিয়ার প্রথম সরকার-স্বীকৃত বালিকা বিদ্যালয় এই বেথুন স্কুল। এই স্কুল থেকে কাদম্বিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন (১৮৭৮)। কাদম্বিনীই হলেন ভারতের প্রথম মহিলা যিনি ভারতের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।


এই বেথুন কলেজের ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী ও চন্দ্রমুখী বসু একসাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শুধু ভারতেই নয়, তখনকার সারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে স্নাতক মহিলা হয়ে রেকর্ড করেছিলেন (১৮৮৩)। কেননা, তখনও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের স্নাতকস্তরের পরীক্ষায় বসার অধিকার ছিল না, এমন কি খোদ বিলেতেও। কোনো ব্রিটিশ মহিলা বিলেতের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে পড়ার অনুমতি পান ১৮৭৯সালে অর্থাৎ কাদম্বিনীরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকস্তরে পড়ার অনমতি পাওয়ার এক বছর পর। এই অনুমতি দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে এক প্রগতিশীল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে।


স্নাতক হওয়ার পর অনেক লড়াই করে কাদম্বিনী ১৮৮৩সালে ভর্তি হন এশিয়ার প্রথম পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষাকেন্দ্র বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ-এ যেটা পরে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ নাম ধারণ করে। এই কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৬সালে প্রিন্সিপ্যালের দেওয়া গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ (জি বি এম সি) শংসাপত্রের ভিত্তিতে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করার স্বীকৃতি পান। আর এর সুবাদে কাদম্বিনী হয়ে ওঠেন ভারতীয় কলেজ থেকে উত্তীর্ণ প্রথম ভারতীয় মহিলা ডাক্তার।


১৮৮৫সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্বারকানাথের প্রচেষ্টায় কাদম্বিনী-সহ ৬জন মহিলা বাংলার প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ১৮৮৯বোম্বাইয়ে (বর্তমানে মুম্বাই) অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগ দেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯০সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে কাদম্বিনী ইংরাজীতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর ফলে তিনি হয়ে যান কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রথম মহিলা বক্তা।


মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির আগেই কাদম্বিনীর থেকে ১৫বছরের বড় বিপত্নীক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির সঙ্গে তার বিবাহ হয়। কাদম্বিনী বসু হলো কাদম্বিনী গাঙ্গুলি। স্কুল থেকে মেডিক্যাল কলেজের কাদম্বিনীর পড়া‍‌শোনার ক্ষেত্রে দ্বারকানাথের একটি বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা ছিল বলেই তাঁর পক্ষে এরকম একটার পর একটা রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে।

আজ Google বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে Google Doodle এর মাধ্যমে।