দেশের মধ্যে প্রথম এই শহরেই Drink From Tap মিশন
পুরী, 26 জুলাই: আজ থেকে কল খুললেই সব ঘরে রাতদিন সাতদিন মিলবে সুরক্ষিত পানীয় জল, তাও আবার IS 10500-র ইন্ডিয়ান কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ডে। গোটা ভারতের মধ্যে পুরীতেই প্রথম এমন সুবিধা পাওয়া যাবে। এটা হল ওড়িশা সরকারের ‘সুজল’ বা ‘ড্রিঙ্ক ফ্রম ট্যাপ’ মিশনের একটি উদ্যোগ। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। আমূল বদল নিয়ে আসার মতো এই উদ্যোগের সুফল ভোগ করবেন এই শহরের আড়াই লক্ষ স্থানীয় মানুষ, এবং প্রতি বছর ভগবান জগন্নাথের পুণ্যতীর্থে আসা দু’কোটি পর্যটক। সুরক্ষিত পানীয় জলের এই ব্যবস্থা শুরু করার ফলে 400 মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, যা কি না রাজ্যের কার্বন ফুটপ্রিন্টকে কমিয়ে দেবে।
এই পরিষেবার এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যে, কল থেকেই সরাসরি জল নিয়ে খাওয়া যাবে। ভারতে এই প্রথম এমন একটা ব্যাপার বাস্তবে সম্ভব হয়ে উঠেছে। পুরীর সব বাড়িতেই মিটার লাগানো জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে দিনরাত সুরক্ষিত পানীয় জল পাওয়া যাবে। এই ভাবে লন্ডন, সিঙ্গাপুর ও নিউ ইয়র্কের মতো আন্তর্জাতিক শহরের সারিতে নিজের জায়গা করে নিল পুরী।
ওড়িশার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী 26 জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুরীতে ‘ড্রিঙ্ক ফ্রম ট্যাপ মিশন’- ‘সুজল’ উদ্বোধন করলেন। মহিমাময় ভগবান জগন্নাথ ও পুরীর সর্ব সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে রাতদিন সাতদিনের এই ‘ড্রিঙ্ক-ফ্রম-ট্যাপ-কোয়ালিটি’-র জল সরবরাহ ব্যবস্থাকে উৎসর্গ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা জগন্নাথ পুরীকে বিশ্বমানের ঐতিহ্যবাহী শহর করে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমাদের অন্যতম কাজ ছিল প্রত্যেক বাড়িতে সুরক্ষিত পানীয় জলের যোগান দেওয়া। এই প্রকল্প আমূল বদল নিয়ে আসবে। বাড়িতে হোক বা বাইরে, পুরীর সব জায়গায় কল খুললেই বিশুদ্ধ পানীয় জল পেয়ে যাবেন এই শহরের মানুষ, পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা। ওড়িশার সব বাড়িতে সুরক্ষিত জলের জোগান দেওয়াটা আমার এক স্বপ্ন। এখন সেটা ক্রমশ বাস্তব হয়ে উঠছে।”
রাজ্যের গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের পাশে-পাশে এবং পুরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে 120টা জলের কল বসানো হয়েছে। সেগুলো থেকে শহরে আসা তীর্থযাত্রীরা জল খেতে পারবেন। যেগুলো বিমানবন্দরের জল-ফোয়ারার মতো একই। পুরী ছাড়াও ওড়িশার আরও 16টা শহরে এই মিশন বাস্তবায়িত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। 40 লক্ষ মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে এই পানীয় জল। ‘সবার জন্য জল’। এই মিশন নিয়ে যে উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। তা এখন ওড়িশার সব বাড়িতে সুরক্ষিত জল দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে উঠেছে। রাজ্যের 114টা পুর এলাকায় এবং রাজ্যের সমস্ত বস্তির প্রত্যেক বাড়িকে এই উদ্যোগের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি, ল্যাবস অন হুইলস, অটোমেটিক ক্লোরিন ডোজার সহ ক্লোরিন অ্যানালাইজার, ওয়াটার কোয়ালিটি সেন্সর, এবং ডোরস্টেপ কোয়ালিটি সার্ভিলেন্সের সাহায্যে জলের গুণমান নিরীক্ষণ ব্যবস্থাকে জোরদার করে তোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও সরকারের মধ্যে মুখ্য সামাজিক সংযোগকারী হিসাবে জলসাথী পদে নিয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর দরিদ্র মহিলাদের। তাঁরা নিজেদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ইনসেনটিভ পাবেন। ওড়িশা অনেক দিন ধরেই মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং সার্বিক বিকাশে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। মহিলাদের জলসাথী হিসাবে নিয়োগ করার মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতিই পূরণ হতে চলেছে। জলসাথীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যেমন কীভাবে মিটার দেখতে হয়, রাজস্ব সংগ্রহ করতে হয়, ফিল্ড ওয়াটারের কোয়ালিটি টেস্ট করতে হয়, এবং সাধার মানুষকে কীভাবে মিটার লাগানোর ব্যাপারে সচেতন করতে হয়। এর ফলে পুরীর সব বাড়িতেই জলের সংযোগের জন্য মিটার বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
যেসব অভিবাসী নিজেদের রাজ্য ওড়িশায় ফিরে এসেছেন, তাঁদেরও এই মিশনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হয়েছে। কলমিস্ত্রিদের নানা রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যেমন কী ভাবে ইনস্টলেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়; কী ভাবে বুঝতে হয় যে, জল কোথাও কোনও ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কি না এবং জলের অপচয় হচ্ছে কি না।
পুরীতে সঠিক মানদণ্ডের জলের যোগানকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে রাজ্যে একটা নিরীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যার নাম স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি। এই ব্যবস্থা জাতীয় স্তরে বহু স্বীকৃতি লাভ করেছে। যেমন, সেকেন্ড ন্যাশনাল ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডে এই ব্যবস্থা পেয়েছে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স। 18তম CSI SIG ই-গভর্ন্যান্স অ্যাওয়ার্ডে পেয়েছে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স।
রাজ্যের আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী প্রতাপ জেনা এই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব। ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে এই অনুষ্ঠান লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊