মেদিনীপুরের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী হায়দার আলি প্রয়াত



নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর 

মেদিনীপুর শহরের জন্য আবারো একটা দুঃখের খবর বয়ে নিয়ে এলো বৃহস্পতিবারের সকাল। এদিন সকাল ৮ টা ৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার সি এম আর আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হলেন মেদিনীপুরের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হায়দার আলী।থেমে গেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় টানা চব্বিশ দিনের লড়াই।


গত ১৭ই নভেম্বর মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে টেষ্টে কোভিড পজেটিভ হওয়ায় তাঁকে সেদিনই কলকাতার সি এম আর আই হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবরা।মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল তিপান্ন বছর। জনপ্রিয় এই সঙ্গীত শিল্পীর বাড়ি শহরের নিমতলা চক এলাকায়। ওখানে উনাদের পারিবারিক ব্যবস্যাও রয়েছে। হায়দার আলী কলেজ জীবনে কে ডি কলেজ অব কমার্সের ছাত্র ছিলেন। মেদিনীপুরের প্রবাদ প্রতিম সঙ্গীত গুরু জয়ন্ত সাহার অন্যতম কৃতি ও প্রিয় ছাত্র ছিলেন হায়দারবাবু। ছিলেন মেদিনীপুরের সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পীঠস্থান রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক।প্রতিবছর জয়ন্ত সাহা বাবুদের প্রতিষ্ঠান স্বরলিপির বার্ষিক অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতো হায়দারবাবুর। রবীন্দ্র নিলয়ে রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতি আয়োজিত যেকোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন হায়দারবাবু। মেদহীন শহরের বেশিরভাগ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের শিল্পীদের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ছিল হায়দার বাবুর।অনেকের কাছে তিনি ছিলেন অভিভাবকতুল্য পথপ্রদর্শক। 



রবীন্দ্র সংগীতের পাশাপাশি আধুনিক গান এবং গজল বেশ দক্ষতার সঙ্গে গাইতেন হায়দার বাবু।প্রতি বছর তার উদ্যোগে জগজিৎ সিং স্মরণে গজলের আসর বসতো রবীন্দ্র নিলয়ে। রবীন্দ্র নিলয়ের পাঁচিলে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শ্লেটের প্রতিকৃতি স্থাপনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে ফোন কল আর সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে মেদিনীপুর জুড়ে। শোকে কাতর হয়ে পড়েন তাঁর অনুরাগীরা এবং সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষরা। বিভিন্ন ভাবে নিজ নিজ ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে শোক জ্ঞাপন করেন বহু মানুষ। হায়দারবাবুর প্রয়াণে বাকরূদ্ধ তার পিতৃতুল্য সঙ্গীত গুরু জয়ন্ত সাহা ও জয়ন্তবাবুর স্ত্রী শ্যামলী সাহা।



রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা হায়দার আলির ঘনিষ্ঠ বন্ধু লক্ষণচন্দ্র ওঝা বলেন, হায়দারদার প্রয়াণে গোটা রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতি, বিশেষ করে রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতির সাংস্কৃতিক বিভাগের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। শোকজ্ঞাপন করেছেন রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতির সভাপতি জগবন্ধু অধিকারী। খড়্গপুর থেকে সঙ্গীত শিল্পী সৌমেন চক্রবর্তী, বেলদা থেকে সঞ্চালক অখিলবন্ধু মহাপাত্র,ঝাড়গ্রাম থেকে ভাস্কর সুবীর বিশ্বাসরা ফেসবুক বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন। ফেসবুক বার্তায় শোকজ্ঞাপন করেছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিজয় পাল,নাট্যব্যক্তিত্ব জয়ন্ত চক্রবর্তী,কবি অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় সহ অসংখ্য মানুষ। শোকে মূহ্যমান কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী ঈশিতা চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী গোস্বামী,সোমা চট্টরাজ শাশ্বতী শাসমল, সঙ্গীত শিল্পী সুমন্ত সাহা,অমিতেশ চৌধুরী,আশীষ সরকার, অনিন্দ্য সেন, সময় বাংলার জয়ন্ত মন্ডল, নৃত্যশিল্পী রাজীব খান, শমীক সিনহা, বাচিক শিল্পী শুভদীপ বসু, রত্না দে, পাঞ্চালি চক্রবর্তী,কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়,রীতা বেরা,মোম চক্রবর্তী , চিত্তরঞ্জন দাস,মৈথিলী ঘোষ, শিল্পী অচিন্ত্য মারিক, অচিন্ত্য বিশ্ব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ চৌধুরী,শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া,কবি নিসর্গ নির্যাসসহ হায়দার আলির বহু অনুরাগী। হায়দার আলি রেখে গেলেন স্ত্রী সোফিয়া, পুত্র আয়মান এবং কন্যা নওসীনকে। এদিন বিকেলে মেদিনীপুরের সংস্কৃতি কর্মীদের উদ্যোগে একটি শোক মিছিল শহর পরিক্রমা করে।