ট্রাক দুর্ঘটনায় মৃত একই পরিবারের ৩জন, আগুন, উত্তেজনা,ঘটনাস্থলে পুলিশ
সঞ্জিত কুড়ি,পূর্ব বর্ধমান
২০১৯ শের শেষে গত ৩১শে ডিসেম্বর গভীর রাতে বর্ধমানের গলসী থানার শিকারপুরে অতিরিক্ত বালি বোঝাই লরীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে উল্টে গিয়ে মারা গেছিলেন একই পরিবারের ৫জন। বছরের শুরুতেই সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি ফিরল বৃহস্পতিবার রাতে বর্ধমানের জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামে।
এদিন রাতে মুইদিপুর গ্রামে অতিরিক্ত বালি বোঝাই লরী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফের উল্টে গেল রাস্তার পাশে থাকা একটি বাড়িতে।বালি বোঝাই লড়ির চাপায় মারা গেলেন মা ও দুই শিশু। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন গৃহকর্তা প্রশান্ত বাউড়ি। মৃতদের নাম সন্ধ্যা বাউড়ি (৩০), রিংকু বাউড়ি (১৪), রাহুল বাউড়ি (১২)। রিংকু স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণীতে এবং রাহুল বাউড়ি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় পৌনে ৯টা নাগাদ মুইদিপুর বালি ঘাট থেকে একটি লরী অতিরিক্ত বালি বোঝাই করে দ্রুত গতিতে মুইদিপুর গ্রামের পূর্ত দপ্তরের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রাস্তার পাশের প্রশান্তবাবুর বাড়িতে উল্টে যায়। সেই সময় ঘরের মধ্যেই শিশুপুত্র ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ছিলেন সন্ধ্যা দেবী। বালি ভর্তি লরী উল্টে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই শিশুর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সন্ধ্যা বাউড়িকে উদ্ধার করে জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে তাঁর মৃত্যু হয় তার ।
এদিকে, এই ঘটনার পরই গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের রীতিমত সংঘর্ষ বাধে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে দুই পুলিশ কর্মী জল সাঁতরে পালিয়ে যান। অভিযোগ, উত্তেজিত জনতার ছোঁড়া ইঁটের আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ ও সিভিক ভলেণ্টিয়ার আহত হন। উত্তেজিত জনতা বালিখাদের অস্থায়ী অফিসে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুন লাগানো হয় দুটি লরী একটি বালির ট্র্যাক্টরেও। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। মৃত দুই শিশুর দেহ আটকে রেখে ওই বালিঘাট বন্ধ, মৃতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবী জানাতে থাকেন জনতা।
এদিকে, জামালপুর থানার পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমসিম খাওয়ায় বর্ধমান থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে হয় রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃতদের ক্ষতিপূরণ এবং দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেবার পর পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
শুক্রবার মৃতদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা করে ৬ লক্ষ টাকা এবং আহত প্রশান্ত বাউড়ির জন্য ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় প্রশান্তবাবুর হাতে। এই টাকার চেক তুলে দেন স্বপন দেবনাথ। উপস্থিত ছিলেন নয়া জেলাশাসক মহম্মদ এনাউর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ অতিরিক্ত জেলাশাসকরাও।
উল্লেখ্য, গলসীর শিকারপুরে একই পরিবারের একই ধরণের ঘটনায় ৫জনের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে জেলা প্রশাসন কয়েক মাস কাটিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই মুইদিপুরের ঘটনায় অনেকেই হতবাক্য।স্বপনবাবু জানিয়েছেন, ওই বালিঘাটটি বৈধ। পরপর দুটি ঘটনা থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জনবসতির মধ্যে দিয়ে বালির গাড়ি যাতায়াতের পরিবর্তে বিকল্প রাস্তা তৈরী করতে হবে। একইসঙ্গে রাস্তার পাশেই থাকা বিভিন্ন বাড়িগুলিকে সরিয়ে সরকারীভাবে তাঁদের জায়গা দেওয়া হবে। এব্যাপারে এদিনই জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়াকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বপনবাবু।
অন্যদিকে, এদিন জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মুইদিপুরের ঘটনায় পুলিশকে আক্রমণের ঘটনা স্বাভাবিক। স্বজন হারানোয় কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু এই ঘটনায় কোনো কেস করা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ঘাতক লরীর চালক মদ্যপ ছিলেন। এই ঘটনায় পুলিশ লরীর খালাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। লরীর চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊