Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

স্বাধীনতা হল সত্য, বিবেক ও সদিচ্ছার দ্বারা লক্ষ্যপূরণ এবং বাধাহীনভাবে কর্মে অগ্রসর হওয়া



স্বাধীনতা হল সত্য, বিবেক ও সদিচ্ছার দ্বারা লক্ষ্যপূরণ এবং বাধাহীনভাবে কর্মে অগ্রসর হওয়া


কলমে: লিপিকা নস্কর

"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায় ? দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে কে পরিবে পায়"। (কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়) খাঁচার ভিতর বন্দীদশা প্রাপ্ত পাখির সমতুল্য পরাধীন নাগরিক।সে মুক্তি পেতে চায় খাঁচারূপ পরাধীনতা থেকে।বন্দী অস্থির পাখির মত মানুষ উন্মুখ হয়ে ছিল স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে।সেই স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, কিছু ধ্বংস করে নতুন কিছু সৃষ্টি নয়।স্বাধীনতা মানে সত্য ও সুন্দর চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ।স্বাধীনতা মানে বিবেক কে জাগ্রত করে বাধাহীনভাবে কর্মে নিযুক্তি।কবির ভাষায়- "আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার হে দেশের উদ্ধার ।। দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে তুল্য তার নাই" ।

পরাধীন মানুষের জীবন মূল্যহীন।তাই তো কবি আহ্বান করেছেন সকলে মিলে স্বাধীনতা যুদ্ধে সামিল হতে ও আত্মনিয়োগ করতে।সেই আত্মনিয়োগ আজ বড় দৃষ্টান্ত। 'বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনে'র মত এক এক জন করে বহু মানুষের মিলিত প্রয়াসে সেই যুদ্ধক্ষেত্র হয়েছে মহোৎসবের ভূমি। স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস।১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগষ্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসন কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতিবছর ভারতে পালিত হয় 'স্বাধীনতা দিবস'।তবে 'স্বাধীনতা' ও 'স্বাধীনতা দিবস' এর ধারণায় নিবিড় সম্বন্ধ থাকলেও 'স্বাধীনতা' শব্দটির নিগূঢ় অর্থ আজও সর্বজনবিদিত নয়। 

স্বাধীনতা মানে 'স্ব অধীনতা' অর্থাৎ নিজের অধীনে চলা।তবে লাগামছাড়া আচরণ নয়, বরং মার্জিত রুচিশীল ব্যবহার।স্বাধীনতা শব্দটি আপেক্ষিক। শব্দটি উচ্চারণে কিংবা শ্রবণে মানসিক প্রশান্তি ঘটলেও কার্যত ফললাভ মেলে না সব ক্ষেত্রে। মনুষ্যেতর সকল প্রাণী স্বাধীনতার পরম তৃপ্তি উপভোগ করতে চায়। এটি মানসিক অনুভূতির এক বিশেষ পর্যায়।যেখানে ব্যক্তিবর্গ এক বিশেষ লক্ষ্য পূরণে তার কাঙ্খিত চাহিদার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়।সকলেই স্বাধীন হতে চায়। এর মানে সকলেই কাঙ্খিত পাওনাটি পেতে চায়। কিন্তু সবার কাঙ্খিত বস্তু ভিন্ন স্বাদের অনুভূতিতে অনুলিপ্ত। তাই তো শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় যেতে চায়, পরিবর্তে তার স্থান হয় কলকারখানায়-দোকানে শিশুশ্রমিক রূপে। "বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে" বাস্তবে একথা সর্বাংশে মেলে না। সে নিঃশব্দে ঘুমানোর স্বাধীনতা পেতে চায়, কোমল তৃণের বুকে উন্মুক্ত আকাশের নিচে খেলতে চায়, পেতে চায় মাতৃস্নেহ, দেখতে চায় অদূর ভবিষ্যতের সীমাহীন স্বপ্ন, গ্রহণ করতে চায় সবুজ পৃথিবীর নির্মল বাতাস। 


এ সবই শিশুটির কাছে অনাকাঙ্খিত। এখানেই তার স্বাধীনতা পদদলিত। কুসুম হয়ে প্রস্ফুটিত হওয়ার পূর্বেই বৃন্তে ফোটা কুঁড়িস্বরূপ শিশুর শৈশব কে ঝরিয়ে ফেলা হচ্ছে। খসে পড়ছে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। অথচ স্বাধীনতার নামে আজও আত্মগরিমায় গর্বিত আমরা। 

 "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান" - স্বাধীন ভারতেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, যার করুণ পরিণতিতে দ্বিখন্ডিত হয়েছে ভারতবর্ষ। জন্ম হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের। তাই তো কিছু স্বাধীনতা থেকে যায় স্মৃতি ও মনের কোণে। স্বাধীনতার নির্দিষ্ট কোন প্রকার নেই, তবে বিভিন্নভাবে তা লিপিবদ্ধ করা যায়। যেমন-ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা ইত্যাদি। সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার গুলির অন্যতম ব্যক্তিস্বাধীনতা। যাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নাম দেওয়া হয়েছে মানবাধিকার। 


সবকিছুতে রাজনীতির রং না মাখিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিলে অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে নিজস্ব সত্তাকে বিকশিত করা যায় অতি সহজেই। এবার আসি বাকস্বাধীনতা।মর্যাদাহানিকর ঘটনা, কুৎসা, পর্ণোগ্রাফি, অশ্লীলতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতা যদি অন্য কারও অপকার করে তবে তা অপকার নীতির মাধ্যমে বাকস্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা গেলেও আধুনিকীকরণের যুগে তা সর্বাংশে দৃশ্যগোচর নয়।ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা অনুযায়ী রাষ্ট্র সকল ধর্মকে সমান নজরে দেখে।হিন্দুর পবিত্র অমরযাত্রা কিংবা মুসলিমদের হজ যাত্রার ভর্তুকি কিংবা শিখদের লঙ্গার প্রথার উদ্দেশ্যে সমান স্বাধীনতা থাকলেও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার কখনোই অবাধ নয়।অর্থাৎ রাষ্ট্র জনশৃঙ্খলা, জনব্যবস্থা, সদাচার, সার্বভৌমত্ব রক্ষার কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করতেই পারে। 

আমাদের স্বাধীনতার মূল মন্ত্র হল গণতন্ত্র। এবং সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল অনুপ্রেরণা ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। আজ তা বিত্তশালী মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই তো আজও অভাব ও পরাধীনতা গ্রাস করছে মানুষকে। এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল আমাদের বীর বিপ্লবীগণ। সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বুকে ধারণ করে শহীদ হয়েছিল তারা। সর্বোপরি দেশ তথা সকলের মঙ্গল হয়, এমন কর্মে সকলে পূর্ণ স্বাধীনতা পাক। 

 বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি ? "নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান"। বাস্তবে এ সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত। সমাজের বুদ্ধিজীবীদের মত সকলকে সমান স্বাধীনতা দিতে পারি না কেন? কেনই বা পারে না সকল শিক্ষার্থী স্কুলশিক্ষা সমাপ্ত করতে? কেনই বা হতে হয় বাল্যবিবাহের শিকার? নারীজাতির চলাফেরার অধিকার আজও বাধাগ্রস্ত। তবে স্বাধীনতা অর্জন নয়, তা রক্ষা করাও আমাদের মৌলিক কর্তব্য।যা বড়ই কঠিন কাজ।তাই আজও প্রশ্নবিদ্ধ আমরা কি স্বাধীন ? উত্তর - না, আমাদের স্বাধীনতা সীমিত। নিত্য নৈমিত্তিক কর্মের ক্ষেত্রেও সেই এক অভিজ্ঞতা। অথচ বীর শহীদের ছবির দিকে তাকিয়ে কতই না বুলি আওড়াই। স্বাধীনতাকে প্রকৃতভাবে উপভোগ করতে চাই ঐক্যবদ্ধতা, হতে হবে বিবেকের অধিকারী।

তবেই চুপিসারে ঘটে যাওয়া অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।হতে হবে না এত হয়রানির শিকার।ফলে সৃষ্টির সম্ভাবনা বেঁচে থাকবে ও স্বাধীনতার পূর্ণ ব্যবহার সার্থক হবে। গোজাতি যেমন বিপদে স্বজাতির পাশে অবস্থান করে তেমনি পুরো মানবজাতির ঐক্যবদ্ধতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে স্বাধীনতা। পরিবারে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে স্বাধীনতার ফারাক ব্যাপক। উচ্চশিক্ষার প্রতিটি স্তরে সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ পড়ে একই পরিবারের মেয়েটির উপর। এমনকি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এক সমস্যা। 

মহিলাদের পৌরহিত্য নিয়ে আজও সেই স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত। তাই স্বাধীনতা হোক সমান সমান। আর্থসামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি সামাজিক নিরাপত্তা, প্রশাসনিক ন্যায়বিচার, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন, বৈষম্যহীন জীবনযাপন, ইচ্ছানুযায়ী জীবিকা নির্বাচনের অধিকারকে মান্যতা দিতে হবে। ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আর নয়। বীর বিপ্লবীদের মিলিত প্রয়াসে স্বাধীনতা নামক শিরোপা অর্জন করা গেলেও চিন্তার অভিব্যক্তি, বিশ্বাস ও ধর্ম উপাসনার স্বাধীনতা সবই বৈষম্যের অতলে তলিয়ে।প্রতিষ্ঠান ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণে বাধা সর্বাংশে।তাই তো স্বাধীনতা মানে কেবল বীর শহিদের রক্তরঞ্জিত পথ কিংবা অসহায় নিপীড়িত মানুষের চোখের জল নয়,অজানা অচেনা লাখো মানুষের ভিড়ে যুদ্ধযাত্রা নয়, নয় ধৈর্য্য সহিষ্ণুতা ও আত্মত্যাগের শিরোপা।স্বাধীনতা হল সত্য, বিবেক ও সদিচ্ছার দ্বারা লক্ষ্যপূরণ এবং বাধাহীনভাবে কর্মে অগ্রসর হওয়া।এর অর্থ ব্যাপক ও প্রসারিত । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

12 মন্তব্যসমূহ

  1. Khup vlo news.pore khub vlo laglo er ami try kor6i amar friends der o news ta dekhar jonno..

    উত্তরমুছুন
  2. At this time it's Very relevant topic. This is a universal question, not only for Indians. overall writing is good, informative and knowledgeable.

    উত্তরমুছুন

Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊

Ad Code