সুজাতা ঘোষ, বাগডোগরা:
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভারতবর্ষে শক্তিপূজা প্রচলিত। ঐতিহাসিকেরা প্রাগার্য হরপ্পা মহেঞ্জোদারো যুগের নানা দেবমূর্তির নমুনা থেকে মনে করেন ,ভারতবর্ষে শক্তিদেবীর পুজো বহু পুরনো। এই দেবী মূলত আরাধিত হত শক্তি দেবতারূপে পরবর্তীকালে এই শক্তি দেবী দেবী চন্ডী রূপে কল্পিত হয়েছে।পুরানের দেবী চণ্ডী অস্ত্রধারিনী, অসুর মর্দিনী ।

 কিন্তু মঙ্গলচণ্ডী দেবীর যে পট ছবি আমরা দেখি তাতে তিনি দ্বিভুজা, হাতে পদ্ম পুষ্প, পদ্মাসীনা ।তবে 'চন্ডীমঙ্গল কাব্যে' চন্ডী দেবীর দুটো রূপ আমরা দেখতে পাই একটি পৌরাণিক অপরটি লৌকিক।  দেবী চন্ডীকে আমরা দেখি কালকেতু ও ফুল্লরার সংসারে। কালকেতু জাতিতে শবর ব্যাধ, তার পত্নী ফুল্লরা এক শবরী । কালকেতু বনে শিকার করে মাংস হাটে বিক্রি করে সংসার চালাতো। একদা দেবী চণ্ডী কালকেতুর গৃহে উপস্থিত হন নবযৌবনা সুন্দরী গৃহবধু রূপে। ফুল্লরা দেবীকে এরূপে দেখে সপত্নী ভেবে নানা ফন্দি-ফিকির করে বিদায় দিতে চেয়েছে-

' ফুল্লরা বলে শুন অধম দুচারিনী।
 তোর তুল্য পাপিষ্ট নারী অন্য নাহী জানী।।
কুন রূপ গুণ মোর পতিতে দেখিলে ।
ছাড়িয়া স্বামীর ঘর জাতি কুল মজাইলে ।।
কুলটা হৈলে তোকে না লইবে ঘরে।
 মাগিয়া খাইয়া ফির দিগ্ দিগন্তরে।।'

এতেও যখন কাজ হয় না নিজে আত্মহত্যা করে স্ত্রী হত্যার দায় তার ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে -

'আমার বচন ধর  গৃহ ছাড়িয়া চল 
তোকে আগ বাড়াইয়া আসি আমি। 
জাতি কুল জদি চাও 
 ফিরিয়া ঘরেক জাও
নহে স্ত্রী হত্যা দিব আমি।'

এইভাবে ফুল্লরা নানা‌ ফন্দি এঁটে দেবী চন্ডী কে তার গৃহ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছেন। কিন্তু ছদ্দবেশে দেবী চন্ডী নানা ভাবে পরীক্ষা নেন। শেষে কালকেতু ও ফুল্লরাকে  দশভুজা দূর্গা রূপে দর্শন দিয়ে প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা ও তাঁদের গুজরাট প্রদেশের অধিপতি করেন এবং কালকেতু দেবী চন্ডিকার পূজা প্রচলন করেন।

      সেই দিন থেকে আজও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন নামে এই দেবী চন্ডীর পুজো‌ করতে দেখা যায় ।প্রধানত বাংলার বৈশাখ মাসের চারটি মঙ্গলবারে এই মঙ্গলচন্ডীর ব্রত পালিত হয় । তবে দেবীর কোনো মূর্তিতে পূজা না করে ঘটে পূজা করা হয়ে থাকে। স্বামী ও সন্তানের মঙ্গল কামনাতে পরিবারের মহিলারাই এই পূজা করে থাকেন। মূলত  পশ্চিমবঙ্গ,অসম, বিহার ঝাড়খন্ড ও বিভিন্ন রাজ্যের অধিবাসীগণ মঙ্গলচন্ডীর ‌ব্রতানুষ্ঠান করে থাকেন।
      
 সহায়ক গ্রন্থ: মানিকদত্তের চন্ডীমঙ্গল