Breaking

Saturday, February 22, 2020

কাকদ্বীপের সবথেকে প্রাচীন জমিদার নস্কর বংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৫০ বছর পুরনো এই মন্দির

কাকদ্বীপের সবথেকে প্রাচীন জমিদার নস্কর বংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৫০ বছর পুরনো এই মন্দির

রবীন মজুমদার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ১৫০ বছর প্রাচীন মন্দির কাকদ্বীপের ইতিহাসে জমিদার বংশের ছাপ এখনো রয়েছে! জমিদার রামগোপাল নস্কর আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে সুন্দরবনের প্রাণকেন্দ্র কাকদ্বীপে এই মন্দিরের স্থাপনা করেন। 

কথিত আছে যে মা শীতলা দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে হেরম্ব নস্কর এই মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। প্রায় দেড় শতাধিক বছর আগে কাকদ্বীপের পূর্ব বাজারে এই মন্দির তৈরি করেন জমিদার রামগোপাল নস্করের হাত ধরেই। ধীরে ধীরে মন্দির এর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার পর থেকেই গোটা দক্ষিণ সুন্দরবনের এই ঐতিহাসিক মন্দির থেকেই সেই যুগের সাধারণ মানুষ থেকে জমিদার পরিবারের সকল সদস্যরা মন্দিরে পূজো দেওয়ার পর যেকোন কাজে তারা বের হতেন। 

জানা যায় সেই সময় কালে গোটা কাকদ্বীপ এলাকা ছিল সুন্দরবনের সুন্দরী, কেওড়া, গরান, হেতাল ও বিভিন্ন প্রজাতির বহুমূল্য গাছে ভরা। এবং এই সুন্দরবনের জঙ্গলে ছিল বিভিন্ন প্রকার বিষধর সাপ, হিংস্র জীবজন্তু ও ছিল সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার অর্থাৎ বাঘ এর বসবাস স্থল। কয়েক হাজার প্রজাতির দুর্লভ পশু পাখির বসবাস যোগ্য একটি জায়গা ছিল কাকদ্বীপ। জমিদার হিরম্ব  নস্কর এবং তার পূর্ব পুরুষেরা শ্রমিক দিয়ে এই জঙ্গল কাটাই করে কাকদ্বীপ কে বসবাস যোগ্য স্থল হিসেবে তৈরি করতে শুরু করে।

সুন্দরবনের নদীতে মাছ কাঁকড়া এবং জঙ্গলের মধু সংগ্রহ করে এখানকার আদি বসবাসকারী মানুষেরা। ধীরে ধীরে এই কাকদ্বীপ থেকে বিভিন্ন বদ্বীপ অঞ্চল গুলিতে কাকদ্বীপের স্থানীয় আদি বাসিন্দারা বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। এই বাণিজ্য কাকদ্বীপ থেকে ছড়িয়ে পরে নামখানা, পাথরপ্রতিমা, g-plot সাগরদ্বীপ, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ ইত্যাদি দ্বীপসমূহে। লস্কর বংশের জমিদার আমলেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কাকদ্বীপ একটি বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে। কিন্তু সেই প্রথা চালু ছিল তখনও আর আজ এখনো। পৌরাণিক এই শীতলা মায়ের মন্দিরে পুজো দিয়েই তারা সমস্ত সুন্দরবনের ব-দ্বীপ সমূহ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পালতোলা নৌকা এবং তার বাবা নৌকা দিয়েই পারি দিতেন।

আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন হতে ক্লিক করুন- CLICK
আমাদের হোয়াটসয়াপ গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন- CLICK
যে কোন সংবাদ, লেখা পাঠান sangbadekalavya@gmail.com
বিজ্ঞাপন দিতে কথা বলুন- 96092 21222


সুন্দরবনের জঙ্গলের মধু সংগ্রহ করা সমুদ্র থেকে মাছ ধরা সমুদ্র থেকে কাঁকড়া ধরা মূল জীবিকা ছিল এখানকার বসতি মানুষদের।  ব্রিটিশ শাসনকালে এই কাকদ্বীপ থেকেই সুন্দরবনের সমস্ত ব-দ্বীপ সমূহে জঙ্গল কেটে এখানকার আদি বাসিন্দারা নিজেদের বসবাস স্থল স্থাপন করে। শীতলা মায়ের এই মন্দিরের বর্তমান প্রধান পূজারী প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান " তখনকার দিনে যাত্রা, গাজন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের যত শিল্পী ছিল তারাও তাদের অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার আগে মায়ের মন্দিরে পুজো দিয়ে তবেই বের হতেন" এবং প্রথা অনুযায়ী জানা যায় এই মন্দিরে তখন পুজো না দিয়ে কোন শুভকাজ এ যদি কেউ যেত তার বিপদ ঘটতো। 

দিন বদলেছে যুগ বদলেছে তবু আজও সেই প্রথা সেই রীতি মেনে এখনো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার মৎস্যজীবীরা এই মায়ের মন্দিরে পুজো দিয়ে তবেই গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয়।  প্রাচীন এই মন্দিরের বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে এবং মায়ের মূর্তি টি প্রাচীনকালে জমিদারদের তৈরি একটি গৃহে বর্তমানে স্থানান্তরিত আছে সেখানে মায়ের প্রতিদিন পুজো সন্ধ্যা আরতি হয়।।