গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দুই লক্ষাধিক প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা গত ১০ বছর যাবৎ বেতন বঞ্চনার শিকার।এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে ২ বছর যাবৎ লাগাতার লড়াই,অান্দোলন করে আসছে UUPTWA সংগঠনের অাকুতভয় সদস্য,সদস্যারা।এই অান্দোলন করতে তাদের আমরণ অনশন করেও রক্ষে হয়নি।বিভিন্ন ভাবে ধমকানী,চমকানী ছাড়াও তাদের উপর জলকামানের আঘাত হয়েছে,কাউকে পুলিশের লাঠি কিংবা বুটের লাথি খেতে হয়েছে,কাউকে বা জামার কলার ধরে টানতে টানতে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সংগঠনের ১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কে জামিন অযোগ্য ধারায় কেস দেওয়া হয়েছে,তাদের হুলিগান আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না যেখানে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী প্রকাশ্যে দাবী করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনার অবসান ঘটাবেন।শাষক দলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্ত্ব জোর গলায় বলেছিলেন যে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক,শিক্ষিকা দের আট হাজার থেকে দশ হাজার টাকার বৃদ্ধি হতে চলেছে।অবশ্যই সঠিক ভাবে ফিটমেন্ট সহযোগে গ্রেড পে'র সঙগে পে-ব্যান্ডের পরিবর্তন করে যদি বেসিক পে তৈরী করা হতো তাহলে সেটাই হতো।অন্যান্য রাজ্যের মতো PRT Scale যেটা PB-4 গ্রেড পে সমৃদ্ধ বেতন সেটি দেওয়া হয়নি।বাস্তবে দেওয়া হয়েছিল PB-3 গ্রেড পে যুক্ত বেতন।কিন্তু সেই PB-3 গ্রেড পে অনুযায়ী যেভাবে ফিটমেন্ট বা ২০০৬ থেকে নোশানাল এফেক্ট সহ বেসিক পে বাড়ার কথা ছিল সেভাবে বেসিক পে'র পরিবর্তন হয়নি।তাই কিছু নবীণ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা বাদে রাজ্য জুড়ে বিরাট সংখ্যক সিনিয়র প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন কেবল ৭০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা বৃদ্ধি হয়েছিল।কারণ তাদের বেসিক পে'র পে-ব্যান্ডের কোন পরিবর্তন করার উদ্যোগ সরকারী ভাবে নেওয়া হয়নি।অথচ কেবল কিছু সংখ্যক নবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকার গ্রেড পে'র সঙগে পে-ব্যান্ডেরও পরিবর্তন করা হল।তাই আশ্চর্য ভাবে বিরাট সংখ্যক সিনিয়ার ও জুনিয়ারের বেতন প্রায় এক হয়ে গেল।তাই এক দশক ধরে বেতন বঞ্চনার পরে আবার এক রকম নতুন ধরনের বেতন বঞ্চনার শিকার হলেন লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষকারা।সিনিয়র হয়েও জুনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের সমতুল্য বেতন পাচ্ছেন,এ বিষয়টি নতুন বঞ্চনার ও ক্ষোভের জন্ম দিল।
এক দশক ধরে বেতন বঞ্চনার অবসানের লক্ষ্য কে সামনে রেখে গত ৬ ই নভেম্বর,২০১৯ যাদবপুর থেকে শিক্ষা মন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশ্য লক্ষাধিক প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার জমায়েত তথা অভিযানের সফল কর্মসূচী পালন করে দেখিয়েছিল UUPTWA।এর পরে কার্যত দুমাসের বেশী অতিক্রান্ত অথচ UUPTWA এর নতুন কোন কর্মসূচীর দেখা নেই। মাঝে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পরীক্ষা, রেজাল্ট প্রকাশনা,নতুন শ্রেণিতে ভর্তিকরণ, B.L.O/D.O হিসাবে নির্বাচনী কাজ এবং সর্বপরি CAA ও NRC নিয়ে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে নানা অান্দোলন UUPTWA এর অান্দোলনের রথ কে থামিয়ে দিয়েছিল।যদিও UUPTWA নেতৃত্ত্বের দাবী উপরের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা সরকার তথা প্রশাসন কে সর্বত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।তাদের আন্দোলন টি মূল্যবোধ ভিত্তিক সেখানে উপরিউক্ত সময়ে কোন আন্দোলনের কথা ভাবাই যায় না।এদিকে সংগঠনের নেতৃত্ত্ব লক্ষ্য রাখছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বেতন বঞ্চনার অবসান ঘটনার আশ্বাস অনুযায়ী কোন সরকারী নির্দেশ প্রকাশিত হয় কিনা।তাই গত দুমাস ধরে সংগঠনের সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস সহ অন্যান্য নেতৃত্ত্ব একাধিক বার বিকাশ ভবনে আধিকারিকের শরাণাপন্ন হয়েছিলেন,দফায়-দফায় মিটিং করে কেবল আশ্বাস পেয়েছেন। তিনি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে তার সঙগে সাক্ষাত করতে একাধিক বার গিয়েও বিফল হয়েছেন।অথচ মাননীয় মন্ত্রী প্রেসকে বলেছেন কোন রকম সমস্যা মেটাতে যেন তারা তার সঙগে দেখা করেন।

তাই বিগত বছরে অনশন কমর্সূচী চলাকালীন ২৬ শে জুলাই,২০১৯ বেতন বৃদ্ধির গ্রেড পে সহ বেসিক পে পরিবর্তনের যে অস্পষ্ট নির্দেশনামা প্রকাশ হয়েছিল সেই ব্যাপারে এবং সেই অনুযায়ী ROPA-2019 এর নতুন বেতন নির্ধারণ কি ভাবে হবে তার সঠিক ক্লারিফিকেশন জানতে চিঠি দিয়ে,বারং বার দেখা করেও কোন লাভ হয়নি।এ বিষয়ে সংগঠনের গুরুত্ত্বপূর্ণ সদস্য অনুপ সাহের সঙগে কথা বলে জানা গেল " উস্থি তার লক্ষ্যে স্থির,আবিচল', ' প্রতিবাদ মঞ্চে,রাস্তার আন্দোলনে,দরজায়- দরজায়,টেবিলে-টেবিলে,মিটিং-মিছিলে বঞ্চনার প্রতিবাদে,নায্য দাবীর সপক্ষে উস্থি ছিল,আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে।প্রশাসন যদি ভেবে নেয় তারা বঞ্চনা মেটাতে কোন উদ্যোগ নেবে না তাহলে তারা ভুল করবে,উস্থি নতুন উদ্যোগে,নতুন ধারায় আন্দোলন গড়ে তুলবে,যে কোন মূল্যে পশ্চিম বঙগের বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষকসম্প্রদায় কে ন্যায়,অধিকার দিয়েই ছাড়বে।"

পে কমিশনের নোটিশ ROPA-2019 অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক মেমোরেন্ডাম প্রকাশিত হবার কথা ছিল যাতে তাদের বেতন বঞ্চনার অবসানে সরকারী উদ্যোগ দেখা যায়।সে রকম একটি নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে গত ১৩ ই ডিসেম্বর। ধরে নেওয়া হচ্ছে এটাই সেই মেমোরেন্ডাম।কিন্তু সেটিও কোন সন্তোষ জনক পরিণতি ঘটাতে পারবে না বলে জানা গেছে।সংবাদ মাধ্যামের সূত্র মারফত যোগাযোগ করা হয়েছিল পূর্বতম অর্থমন্ত্রী মাননীয় অসীম দাসগুপ্ত মহাশয়ের সঙগে। তিনি সব দেখে শুনে জানিয়েছেন ROPA- 2019 অনুযায়ী ২০১৬ সালের আগের সমস্ত সিনিয়র প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা দের বেসিক স্যালারি নির্ধারণ করা যায় না,তাই কোন রকম বেতন বঞ্চনা মিটবে না।ফলতঃ বর্তমান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন বঞ্চনা মেটার কোন অাশাই থাকবে না বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।এমনকি মাদ্রাসা প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙগে সাধারণ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সমতা দুরের কথা তা আরও বেড়ে যাবে বলে জানা যাচ্ছে।এদিকে জেলায় জেলায় D.I,SIS সাহেব একপ্রকার চাপ দিয়েই শিক্ষকদের অপশান,ফিক্সেসান ফর্ম পূরণ করাচ্ছেন। বিভিন্ন সংগঠন সেই ভাবে তাদের সদস্য- সদস্যাদের এই কাজে বাধ্য করাচ্ছেন।
এতে সমস্ত জেলায় শিক্ষকদের মধ্যো চাপা ক্ষোভের সঞ্চার ঘটছে। এখন প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনার জন্য বিভিন্ন সংগঠন হাত গুটিয়ে বসে আছে কেন? প্রশ্ন উঠছে UUPTWA সংগঠনও বা কি করছে? তবে কি তাদের বিগত দু-মাসের নিরবতা কি আগাম ঝড়ের লক্ষণ?

হ্যাঁ, যে রকমটা আশা করা হচ্ছিল সেরকমটাই ঘটতে চলেছে আগামি দিনে পশ্চিম বঙগের বহুচর্চিত শিক্ষক সংগঠনে UUPTWA এর পরবর্তী কর্মসূচীতে।অাগামি ১৮ ও ১৯ শে জানুয়ারী হতে চলেছে সংগঠনের রাজ্য কমিটির এক গুরুত্ত্বপূর্ণ মিটিং।অাশা করা যাচ্ছে এই মিটিং এ আগামী দিনে এক বড় আন্দোলনের রুপলেখা তৈরী হতে চলেছে।হয়তঃ আগামীদিনে রাজ্যবাসী এক অভুতপূর্ব শিক্ষক আন্দোলন দেখতে চলেছে!
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊