স্বর্ণলতা রায়কে চিঠি
রানা সরকার 

কেমন আছো তুমি? জানি তুমি ভালো নেই। তবুও জিজ্ঞেস করতে হয়। জানো, কখনও কখনও তোমাকে একান্তেই পেতে চেয়েছিলাম আমার নীরবতা উগরে দিতে। তা বুঝি এ জনমে আর হলো না। বেরিয়ে পড়লাম তোমার হৃদয়ের  মফস্বল থেকে কিছুটা  দূরে, রেলে। রেলে চড়তে চড়তে  আমি সবটা জেনে গেছি, বিশ্বাস করো এখন আর নদীর ওপর পানা পাতা কিংবা মাছরাঙার শিকার দেখতে সুন্দর লাগে না। আসলে এখন আমার কাছে জল আর মাছের দুঃখই বড় হয়ে ওঠে। তোমার জানতে ইচ্ছে করে না বন্ধু নদীর জল ঠিক কতটা গড়িয়ে প্রেমিক হয়ে উঠেছিল? সবটাই কি মিথ্যে ছিল? তিস্তার চর, গাজোল ডোবা, মোহিতনগর রেলগেট, রাজবাড়ি, রাজবাড়ি দিঘি, ভ্রামরী দেবীর মন্দির?  না অভিযোগ করছি না আসলে আমি সবটা জেনে গেছি । আমি বুঝি, তোমারওতো তোমার বাবার প্রতি দায়িত্ব রয়েছে আর কাউকেই নাইবা অবহিত করলে। তবুও কেন যেন এখনও ভোররাত পর্যন্ত ডায়েরি কলম নিয়ে বসে থাকি। তবুও কবিতার কোনো নিজস্ব ভাষা খুঁজে পাইনা। কবিতাও আর আসে না। সবশেষে বালিশের নিচে লবণাক্ত চোখ মাথা গুঁজে দিই। বিগত কয়েক অমাবস্যা যাবৎ এমনটা কেটে যাচ্ছে কিছুতেই ঘুম আসছে না। আর ঘুমিয়ে গেলে পুনরায় এরাজ্যে কিংবা এদেশে আর জন্ম নিবো না কথা দিচ্ছি। বিশ্বাস করো। শুনেছি "গরীব হয়ে জন্মানো পাপ নয় কিন্তু গরীব থেকে যাওয়া ভীষণ রকমের পাপ।" আমি কি করবো বলো। আমি দেখেছি লাখো লাখো কপালে আঁকা চুমু ধ্বংস হয়ে গেছে চাকরি না পেয়ে। হ্যাঁ চাকরি না পেয়ে। চলছে প্রেমিকের অসম লড়াই।

ভালোবাসি বলেই অপেক্ষা করতে হবে এমনটা বলছি না। আসলে আমি সবটা জেনে গেছি । রেলে পরিচয় হয়েছে বালিকা ক্লিওপেট্রার সঙ্গে। এখন আমি ক্লিওপেট্রাকে চিনি, জানি। কত নদীর জল গড়িয়ে যাবে তাতে তোমার কি? তোমার গায়েতো সেই ক্লিওপেট্রার রক্তই বইছে। কি অনায়াসেই এক ফুঁ দিয়েই উড়িয়ে দাও। অভিযোগ করছি না। আমি বুঝি, তুমি নারী,  তোমারওতো দায়িত্ব রয়েছে ফসল ফলানোর।ফসল না ফললে সব ধ্বংস হবে। হারিয়ে যাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রেমিক। বালিকা ক্লিওপেট্রা আমার কাছে বসতেই খেয়াল করি আমার স্টেশন এসে হাজির, নেমে পড়তে হবে। শুরু হবে আমার ইঁদুর দৌড়। জানিনা কতটা অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারলে হলুদ আলো দেখতে পাবো। সবটা বলা হল না, বাকি থেকে গেলো পাহাড়ের কথা, আকাশের কথা মাটির কথা। যাওয়ার পথে বলতে চাই তুমি যেনো পাথরে পরিণত না হও। হারিয়ো না নিজস্বতা। 

তুমি যত আঘাত করো 
আমি হয়ে যাই মাটি... 

                                                      ইতি 
                                        তোর বন্ধু পৃথ্বীরাজ।  

পুনশ্চঃ ঘুম ভেঙে নবজন্ম হলে গাছ হতে চাইবো। তোর সাথে আমার হবে শেকড়ে শেকড়ে সম্পর্ক।