প্রানবায়ু
বাসুদেব দাস


আমি ফুটপাথ আর সামনে বড়লোকের দামী গাড়ি। দেখা হয় বৈকি , সেভাবে আলাপটা হয়ে ওঠে না । আমি যে প্রচন্ড নীচু। টাই লাগানো উচু গলার সমান না হলে কি করেই বা কথা বলা মানায় আমার। তোমাদের খাঁজকাটা বুটের তলার সুগন্ধি ধুলোয় আমার নাক ঢেকে যায়। আমার গোটা গায়ের উপর ধুলোর গাঢ় চাঁদর পড়ে, রোজ বেড়ে যায় তার পুরুত্ব। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে খুব ! আমি হাঁপাই, সভ্যতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চাই মহাকাশে, আমিও মেঘের বিহ্বল স্বপ্ন দেখি প্রতিটা বিনিদ্র রাতে ! চাই, যাক সরে আমার এই অকাম্য জীর্ন জরার মতো ধুলোর ব্যাধি ! 

শান্তি যে একেবারে মেলে না তেমনটা নয় । মাঝে মাঝে কোনো পাগলের খামখেয়ালিপনা ভালোবাসি । তার শরীরে আছে সাত বছর পুরানো ঘামের গন্ধ, তার পোশাকে কয়েকশো কুকুরের আদরের দাগ , তার চুলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে চলার উকুনের কৃতজ্ঞতা বাচে । গরমের তিক্ত রাতে সে যখন কয়েককাল না মাঁজা কয়লা কালো দাঁত বের করে বিশ্রীগন্ধ তুলে ফু দিয়ে আমার ওপর থেকে ধুলো সরায় ,বিশ্বাস করুন প্রানটা জুড়িয়ে যায় আমার ! তার ধুলো ওড়ানো সেই দু-ফুটের খোলা দিয়ে আমি নিশ্বাস নেই ! সেই প্রানবায়ু আমাকে উত্তোলিত উত্তেজিত করে ঠিক যেমনটা শীতের প্রাতে জানালা খুললে হুহু করে ঠান্ডা বাতাস আসে জুড়িয়ে দেয় মনপ্রান। যেটুকু প্রানশক্তি পাই; কে জানে হয়তো কখনো সব পাগলগুলোর পাগলামি সেরে যাবে, কিংবা খরার ধুলোতে যুগ-কাল অবধি রইব ঢেকে , তখনকার জন্য জমিয়ে রাখি, "প্রানবায়ুর যে প্রচন্ড দাম" ॥