অত্যন্ত অসহায়তায় যাদবপুর ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাজ্যপাল


গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনকড়কে কালো পতাকা দেখায় পড়ুয়ারা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে কোর্ট মিটিংয়ের সভাপতিত্ব করতে বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পরেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে কালো পতাকা দেখিয়ে গো ব্যাক স্লোগানও তোলেন। এই বিক্ষোভের জেরে প্রায় ৪৫ মিনিট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আটকে ছিলেন তিনি। তারপর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে নিরাপদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত এক নম্বর কমিটি রুমে পৌঁছে দেন।

এর আগে রাজ্যপালের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বয়কটের ডাক দেন পড়ুয়ারা। ২৪ ডিসেম্বর নির্ধারিত থাকা সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল তথা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাত থেকে ডি.লিট্ ও ডি.এসসি ডিগ্রি পাওয়ার কথা ছিল কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত মানুষের। যদিও সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে একটা সাধারণ সমাবর্তনের কথা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের শুধু ডিগ্রি ও সংশাপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে এদিনের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের দাবি, "অযথা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে নাক গলাচ্ছেন রাজ্যপাল।"  পড়ুয়াদের তরফে NRC এবং CAA বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল রাজভবনে আসুক। তিনি সব কথা শুনে এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এরপরই বাবুল সুপ্রিয় প্রসঙ্গে টেনে ছাত্রীদের অভিযোগ, ওই ঘটনায় বহিরাগতদের তাণ্ডবে অনেক ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন, তার কোনও উত্তর কেনও তিনি দেননি? এর জবাবে সরাসরি রাজ্য সরকারের দিকে নিশানা করে রাজ্যপাল বলেন, তাঁর কাছে এই বিষয়ে কোনও তথ্য সরকারের তরফে পৌঁছায়নি। তিনি বহুবার রাজ্য সরকারের কাছে সেই তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোন উত্তর আসেনি।


এদিনের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল জানান-"যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।"

তবে আজ তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্যহন বলে টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন-


মঙ্গলবার সকাল ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত টানা ৪৫ মিনিট ধরে শহরের ঐতিহ্যবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুরের ক্যাম্পাসে ঘেরাও করে রাখা হয় আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধানকড়কে। এরপরও চলে পড়ুয়াদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ। ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁর গাড়ি ঘিরে চলে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। চলে গো ব্যাক স্লোগান। সিএএ, এনআরসির প্রতিবাদ ও এই ইস্যুতে রাজ্যাপালের অবস্থানের জেরে চলে এই বিক্ষোভ। আর এমন এক দিনে যাদবপুর এই ছবি দেখল ,যেদিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন দিবস।

রাজ্যপাল যখন ক্যাম্পাসে , তখন তাঁর গাড়ি ঘেরাও হতেই ক্যাম্পাসের অপর প্রান্ত থেকে তাঁকে ফোন করে কথা বলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। এরপরই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাজ্যপাল বলেন, ' আমি এখানে আমার কাজ করতে এসেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাকে বলেন যে তিনি অসহায় তবে আমি অসহায় না। ওরা আগুন নিয়ে খেলছে। রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার মধ্যে তারা বিষ ঢালছে। ' তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রের লজ্জা এটা। এটা আমার জন্য খুব দুঃখের বিষয়।'

এদিন সমাবর্তন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে গোটা ঘটনার জেরে। পড়ুয়ারা আন্দোলের রাস্তা থেকে সরে যেমন আসেননি, তেমনি সকালে দেখা যায়, গাড়ি ঘেরাওয়ের মধ্যেও রাজ্যপাল ক্যাম্পাসে গাড়ির মধ্যেই ছিলেন। এরপর বারবার আন্দোলনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর্জি জানায় রাজ্যপালের রাস্তা ছাড়ার জন্য যাতে অনড় অবস্থান দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ