গৌতম সাহাঃ
গত ৬ নভেম্বর UUPTWA এর ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী তারা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙগে দেখা করার উদ্দেশ্যে যাদবপুর ৮ বি বাস স্টান্ডের পাশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নং গেট থেকে সুশৃঙখল মিছিল এগিয়ে এলে পুলিশ বাঘাযতিন মোড়ে আঁটকে দেয়।


UUPTWA নেতৃত্ব ২৪ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তাদের বক্তব্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যতক্ষন না তাদের নায্য দাবী মেনে নিচ্ছেন এবং সরকারী নোটিশ প্রকাশ করছেন ততক্ষন তারা অবস্থান করবেন। অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই শিক্ষামন্ত্রী তিনজন প্রতিনিধির সঙগে আলোচনায় বসবেন বলে অনুরোধ করেছেন।

তিনজন প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রীর সংগে আলোচনার পর ফিরে আসেন। আলোচনায় মেলেনি কোন সমাধান। ঘোষিত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উস্থিয়ানরা। পৃথা বিশ্বাস জানান-অবস্থান চলবে তবে সাধরণ মানুষের অসুবিধা যাতে না হয় তাই রাস্তা থেকে অবস্থান কমর্সূচী পার্শ্ববর্তী পার্কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

কিন্তু রাত নামতেই গ্রেপ্তার হন শয়ে শয়ে উস্থিয়ান। উস্থিয়ানরা স্থানীয় গুন্ডাদ্বারা প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
৭ নভেম্বর UUPTWA রাজ্য সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, ৬ নভেম্বর রাতে ১২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ লালবাজার থেকে ১২৪ জনকে মুক্তি দেওয়া হলেও ১২ জনকে যাদবপুর থানায় আটকে রাখা হয়৷ ওই ১২ জন শিক্ষককে মুক্তি দেওয়ার শর্তে নেতৃত্বকে ডেকে পাঠানো হয়৷ কিন্তু, থানায় নেতৃত্ব উপস্থিত হতেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে খবর৷
এইদিন আলিপুর আদালত ব্যক্তিগত ১০০০ টাকা বন্ডে উস্থির সভাপতি, সম্পাদিকা সহ সকল উস্থিয়ানদের জামিন দেন ।

গত ১৩ তারিখ, বুধবার আরো তিনজন জামিন পান আর ঐ দিনই তিনি বিকাশ ভবনে দেখা করতে যান।  বিকাশভবনের সামনে দাঁড়িয়ে উপ্তার রাজ্য সম্পাদিকা মাননীয়া পৃথা বিশ্বাস জানান- শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার সমাধানের কথা প্রেসের মাধ্যমে জানালেও বাস্তবে তার উল্টোটাই হচ্ছে। আজ আলোচনার জন্য নেতৃত্ব বিকাশভবনে গেলে শিক্ষাদপ্তরের তরফে জানানো হয় তারা কোনরকম কমিউনিকেট করবে না। এমনকি পে কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করাবার কথা বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সে বিষয়েও শিক্ষাদপ্তর কোন তথ্য দেননি বলে সম্পাদিকা জানিয়েছেন। 

পৃথা বিশ্বাস আরও জানান- ২৬ তারিখের প্রকাশিত সরকারি নির্দেশিকার সঠিক ব্যাখ্যা যদি ১০ দিনের মধ্যে দেওয়া না হয় তবে আমরা আবারও আন্দোলনে নামার কথা বলেছিলাম। আজও চেষ্টা করেছি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের। কিন্তু তা যখন হলও না তখন আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই গ্রেপ্তার করে, লাঠিচার্য করে জলকামান দিয়ে শিক্ষক আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যায়নি, শিক্ষক আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবেও না। প্রয়োজনে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার, প্রাপ্য সম্মান, যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনক্রম বুঝে নিতে আমরা আবারও আন্দোলনে নামবো।
প্রসংগত গতকাল একটা খোলা চিঠি লিখেছেন সম্পাদিকা শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। 

"মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহাশয় সমীপেষু

সাংবাদিকদের বুমের সামনে আপনাকে ভীষণ মানবিক এবং গনতান্ত্রিক শোনাচ্ছিল সেদিন। সত্যিই গর্বিত হচ্ছিলাম, আপনাকে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ভেবে। আপনি সেদিন বলছিলেন, শিক্ষকদের অভাব অভিযোগ থাকলে সেটা "নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের" কাছে জানানো উচিৎ, রাস্তায় নেমে  স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত না করে। খুবই যুক্তিসংগত আবেদন এটি। আমরা এটিকে সম্মানও করি।
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ, বিগত উনিশ মাসে সেই "নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ" কোনটি সেটা বুঝতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সেটা হয়তো আমাদের সাংগঠনিক অপরিপক্কতা, মেনে নিলাম।আপনিও নিশ্চিত এটা মেনে নেবেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনার বৃত্তান্ত নিয়ে এতবার ছুটে গেছি বিকাশভবনে, আপনার টেবিলে, আপনার সচিবদের কাছে যে, বিকাশভবনের প্রতিটি ইঁট আমাদের চিনে গেছে। 
চোদ্দো দিনের অনশন যেদিন ভঙ্গ করেছিলাম আপনার দপ্তরের সরকারি নির্দেশ (G.O.) দেখে, সেদিন ভেবেছিলেন কিছুটা হলেও সম্মান ফিরিয়ে দিতে পেরেছি পশ্চিমবঙ্গের প্রাথ‌মিক শিক্ষকদের। সত্যিই বুঝিনি, আরও বড় প্রবঞ্চনা লুকিয়ে আছে এই সরকারি নির্দেশের (G.O) মধ্যে। তথাকথিত 'টেবিল সেটিং' আন্দোলন শিখে উঠতে পারিনি তো এখনো। সে ব্যর্থতা-ও আমাদেরই। 

বিশ্বাস করুন, গত ৬ই নভেম্বর, আপনার সাথে দেখা করতেই চেয়েছিলাম। বুঝে নিতে চেয়েছিলাম, আপনার দপ্তর থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত শেষ সরকারি নির্দেশের মর্মার্থ। কোনো অস্ত্র ছিলোনা আমাদের হাতে। কলম, চক, ডাস্টার ছাড়া কোনো অস্ত্র ব্যবহার করিনি আমরা এখনো পর্যন্ত। তারপরও আপনার প্রশাসন আমাদের গ্রেফতার করেছে, আমাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারার মামলা রুজু করা হয়েছে। সেই আইনি লড়াই লড়ে, আজ যখন আবারও আমরা বিকাশভবন গিয়েছিলাম, সেখান থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে আমাদের। আপনার অফিস আমাদের পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে আমাদের সাথে আর কোনো আলোচনা নাকি করা হবে না। 

শেষে একটা অনুরোধ দিয়ে শেষ করবো। আপনি যদি অনুগ্রহপূর্বক আমাদের জানান সেই 'নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ' কে বা কার, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ কৃতজ্ঞ থাকবে আপনার কাছে। আর না জানালে...... ভবিষ্যতে,  আপনার অবুঝ-দামাল-নাছোড়বান্দা শিক্ষকদের সমস্ত কৃতকর্মের দায়ও কিন্তু কিছুটা হলেও আপনাকে নিতে হবে।

আপনার শারীরিক সুস্থতা কামনা করি। ভালো থাকবেন।

                      নিবেদন, ইতি,

                        পৃথা বিশ্বাস
                         সম্পাদিকা,
                         UUPTWA"




আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে নজর রাখুন-