গতদিন বাংলা গানের ইতিহাস থেকে যে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল তার প্রত্যেকটির উত্তরই 'গ'। আজ এই পর্ব থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্নের নমুনা উত্তর দিচ্ছি। বড় প্রশ্নের ক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে সেই বিষয়টিকেই সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে, অযথা অতিরিক্ত কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই। আর অবশ্যই শব্দ সংখ্যার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এইজন্য বাড়িতে লেখার অভ্যাস রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ বাংলা গানের আদি নিদর্শন কোথায় পাওয়া যায়? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদান করে বাংলা গানের ধারায় তার গুরুত্ব নির্দেশ কর । ১+২+২ =৫
উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যেমন আদি নিদর্শন চর্যাপদ তেমনি বাংলা গানের ইতিহাসের আদি নিদর্শনও চর্যাপদ বা চর্যাগীতিকা ।
চর্যাগানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ- “চর্যাপদ” হলো “চর্যাপদ গীতিকা” বা গানের সমাহার । বৌদ্ধ পন্ডিতেরা তা সুর সহকারে গাইতেন এবং প্রতিটি শ্লোকের উপর রাগ বা রাগিনীর নাম লেখা থাকতো । এ গুলোর মোট সংখ্যা উনিশ এবং যদি “শবরী” ও “শীবড়ী”, “গোবড়া” ও “গৌড়া” কে একটি বিবেচনা করা যায় তাহলে সতেরোটি । আবার “চর্যাপদ” এ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত রাগ হলো “পটমঞ্জরী” । অন্যান্য রাগের মধ্যে “মালসী”, “মল্লারী”, “রামক্রী”, “কামোদ”, “বরাড়ী”, “বঙ্গাল”, “গবড়া” উল্লেখযোগ্য । এগুলো আর্য এবং স্থানীয় সুরের মিশ্রনে তৈরী হয়েছিলো ।
বাংলা গানের ইতিহাসে চর্যাপদঃ- চর্যাপদ একাধিক চরণবিশিষ্ট, অন্ত্যমিলযুক্ত ও গীতিধর্মী । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সংস্কৃত সাহিত্যের চিত্রধর্মী শ্লোক বাংলা সাহিত্যের উপর কোনও স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । বরং চর্যার গীতিকবিতাগুলিই পরবর্তী বাংলা কাব্যসঙ্গীতের আঙ্গিকের ক্ষেত্রে আদর্শ হয়ে ওঠে । বৈষ্ণব পদাবলি, বাউল গান, সুফি মুর্শিদি গান, নাথপন্থী দেহযোগী গান বা শাক্তপদাবলি– সবই চর্যাসংগীতের উত্তরসূরী ।
চর্যার কোনও কোনও গানে তত্ত্ব তার কাব্যের রূপটিকে ছাপিয়ে গেছে। সেইসব গানের সাহিত্যমূল্য নগন্য । কিন্তু অনেক গানেই যেসকল রূপকের আড়ালে ধর্মকথা ব্যাখ্যাত হয়েছে তার সজীবতা ও পার্থিব সুবাস তাকে একটি সর্বাঙ্গসুন্দর কাব্যচিত্ররূপে তুলে ধরেছে। এইসব গানের সাহিত্যমূল্য অপরিসীম।
প্রশ্নঃ ‘গীতবিতান’ কী জাতীয় গ্রন্থ ? বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। ১+৪
উত্তরঃ ‘গীতবিতান’ একটি গানের সংকলন গ্রন্থ । গীতবিতান সংকলনে সংগৃহীত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সব গান।
রবীন্দ্রনাথের ভাঙ্গাগানঃ ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী প্রদত্ত একটি তালিকা অনুসারে, রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গান অর্থাৎ অপরের সংগীত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত গানের সংখ্যা ২৩৪।রবীন্দ্রনাথের এই ভাঙ্গাগান নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে ।
এই জাতীয় গানে আমরা লক্ষ্য করি ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল ও টপ্পার পাশাপাশি তারানা, হিন্দি লঘু সঙ্গীত, ভজন, পল্লীগীতি, পাশ্চাত্য সঙ্গীত প্রভৃতি থেকে অনুপ্রানিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ স্বকীয় কিছু গান রচনা করেছেন । যেমন-
১) তারানা ভেঙ্গে- ‘সুখহীন নিশিদিন’
২) লঘু সঙ্গীতের সুরে –‘ওরে ফাগুন লেগেছে বনে বনে’
৩) মীরার ভজন ভেঙ্গে –‘ আমার সোনার বাংলা’
৪) কর্নাটি সুরে ‘বড়ো আশা করে’
৫) স্কটিশ ব্যালাড ভেঙ্গে – ‘ওহে দয়াময় নিখিল’ প্রভৃতি ।
অনেকে বলে থাকেন এই ভাঙা গান আসলে রবীন্দ্রনাথের ‘চুরি’ করা গান । সমালোচকেরা হয়তো ভুলে গেছেন যে ‘চুরি’ আর ‘অনুপ্রানিত’ দুটি সম্পূর্ন আলাদা ।পৃথিবীর প্রায় সব বিখ্যাত সাহিত্যিক বা সংগীত স্রষ্টাই অন্যের সৃষ্টি দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়। এতে দোষের কিছু নেই।
সমালোচনার বাইরে বেরিয়ে বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথের এই ভাঙা গান বাংলা গানের সম্ভারে এক উজ্জ্বল রত্ন । তাঁর জন্যইতো বাংলা গান এতো বৈচিত্র্যপূর্ন হতে পেরেছে ।
প্রশ্নঃ বাংলা আধুনিক গান বলতে কী বোঝ ? বাংলা আধুনিক গানের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট বর্ননা করে এই পর্বের গানের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো । ১+২+২
উত্তরঃ ‘আধুনিকতার বিচার সময় দিয়ে নয়, মর্জি নিয়ে’- বাংলা আধুনিক গানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য । প্রায় বিংশ শতকের ৩০ এর দশকে যখন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনোইতিক পরিবর্তন বাঙালির রুচি, অভ্যাস, মানসিকতা সমস্ত কিছুকেই বদলে দিল – স্বাভাবিক ভাবে তাঁর প্রভাব পড়লো বাংলা গানের জগতেও । আর এই সময়কার সঙ্গীতকেই সাধারণত আধুনিক সঙ্গীত বলে অভিহিত করা হয় ।
উদ্ভবের প্রেক্ষাপটঃ ১৯৩১ সালে প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের যাত্রারম্ভ – রেডিয় , গ্রামোফোনের প্রসার প্রভৃতি নানা কারণে ধীরে ধীরে তৈরি হতে লাগলো বাংলা গানের একটা বাজার । ফলে বাজার এবং চাহিদার কথা ভেবে গ্রামোফোন কম্পানি গানের রেকর্ডিং শুরু করলো । গান হয়ে উঠলো পণ্য । এইভাবেই শুরু হলো আধুনিক বাংলা গানের শুভযাত্রা ।
বৈশিষ্ট্যঃ এক) পূর্বে যে সকল গান রচয়িতা নিজে গান লিখে নিজেই সুরারোপ করে আপন বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন – আধুনিক বাংলা গানের ক্ষেত্রে তার পরিবর্তন ঘটলো । গানের রচয়িতা, গানের সুরকার, গানের শিল্পী সব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল ।গানের রচয়িতা ,গানের সুরকার, গানের শিল্পী সব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো ।
দুই) আধুনিক বাংলা গানে শুরু হলো যন্ত্রানুসঙ্গের ব্যবহার । দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সাথে যুক্ত হলো বেহালা, ড্রাম, গীটার প্রভৃতি বিদেশী বাদ্যযন্ত্র ।
আগামী পর্বে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হবে। ফেসবুক পেজটি লাইক করে রাখো, যাতে কোন সংখ্যাই চোখের আড়ালে না যায়।
নিয়মিত আপডেট পেতে নজর রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে -
like our facebook page for more update
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊