গৌতম সাহা, স্টাফ রিপোর্টারঃ   
গতকাল ছিল ১১ ই নভেম্বর মৌলানা আবুল কালাম আজাদের জন্মদিন।তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। তাই এই দিনটি খুবই মর্যাদা ও সম্মানের সঙগে পালিত হল 'জাতীয় শিক্ষা দিবস' হিসাবে।এমন একটি দিনে শিক্ষকমহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল কারণ আগেরদিনেই তাদেরই প্রাপ্য সম্মান ও অনায্য বেতন নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান মাননীয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার।সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ব শিক্ষক থেকে প্রাথমিক শিক্ষক,ট্রেনড্ গ্রাজুয়েট টিচার থেকে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তারা তাদের নায্য বেতন থেকে বঞ্চিত।বেশ কয়েকটি  শিক্ষক আন্দোলন ঘটেছে এ রাজ্যে। প্রায় প্রতিটি আন্দোলনের পরিণতিই খুব একটা সম্মানজনক ফলাফলের হয়ে ওঠেনি।এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকরাও নাছোড়বান্দা, প্রতিটি সংগঠনই গনতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এর শেষ দেখতে চায়।

গত শনিবার যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশানের একদল প্রতিনিধি মাননীয় রাজ্যপালের সঙগে কথা বলেন ও তার হস্তক্ষেপ দাবী করেন কারণ UGC স্কেল অনুযায়ী  তারা তাদের প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত। এদিকে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় পেয়ে গতকাল থেকেই থেকে বিকাশ ভবনের ১০০ মিটার দুরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করল রাজ্যের হাজার হাজার পার্শ্বশিক্ষকরা।তাদের দাবী সমকাজে সমবেতন, সঠিক বেতন কাঠামো তৈরী।এছাড়াও তারা সরব হয়েছেন যে তারা দিল্লী তে PAB রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮,০০০/- টাকা বেতন থেকেও বঞ্চিত।এর মধ্যেও আপনারা অবগত আছেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা গত এক দশক ধরে PRT scale থেকে বঞ্চিত যেটা ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত রাজ্য তাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে আসছেন।এই বঞ্চনা নিয়ে সবথেকে বেশী সরব হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের নবীনতম সংগঠন UUPTWA। তাদের সংগঠনের নেতৃত্বের মতে কিছু দিন আগে টানা ১৪ দিন অনশন করেও শিক্ষা মন্ত্রী তার দেওয়া কথা রাখেননি। তিনি বলেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙগে মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষদের বেতনের কোন ফারাক তিনি রাখবেন না।কিন্ত কিঞ্চিত গ্রেড পে বৃদ্ধি করেই তিনি এই দায় আপাতত সেরেছেন।এদিকে গত ৬ ই নভেম্বর তাদের ডাকা আন্দোলনকে প্রশাসন বলপূর্বক দমন করতে চেয়ে তাদের ৭ জন নেতৃত্ত্বের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য মামলা দায়ের করেছেন।তবে নেতৃত্ত্বের দাবী তাদের আরো ৩ জন নেতৃত্ত্বকে এই ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।তাই এই অনৈতিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে তাদের সংগঠন মাননীয় রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেন ও তার হস্তক্ষেপ দাবী করেন।

গতপরশু হাইকোর্টে পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে এক যুগান্তকারী রায় বেরিয়েছে।এই রায়ের পরে শিক্ষকরা প্রশাসনের লাল চক্ষু উপেক্ষা করেই তাদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবেন।এই রায়ে আইনজীবি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের অবদান চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন UUPTWA সংগঠনের কুশলী নেতা অনুপ সাহু মহাশয়।তার মতে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে কোন আন্দোলনে কখনই রাষ্ট্র বাধা হয়ে উঠতে পারে না কারণ রাষ্ট্রের পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেছে গণতান্ত্রিক উপায়ে।সুতরাং হাইকোর্টের এই রায় আগামীদিনে ন্যায় ও সঠিক বিচার পেতে হওয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলির কাছে একটা বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে এটা বলাই বাহুল্য।এই ঐতিহাসিক রায় আগামীদিনে অন্যায় ও বঞ্চনায় বিরুদ্ধে সংগঠিত ভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে  সাধারণ মানুষ তথা বিভিন্ন জীবিকার মানুষকে অক্সিজেন যোগাবেই।তাই প্রশাসনের রক্তচক্ষু এবার বন্ধ হবে.....এটা আশা করা যায়! সেই ঐতিহাসিক রায়ের কপিও তিনি এই সংবাদ মাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন।আগামীদিনের নায্য দাবীর পক্ষে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা এই রায়কে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাবেন এটা মোটামুটি ধরে নেওয়াই যায়।গনতান্ত্রিক আন্দোলনগুলিকে সংগঠিত করতে এই রায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এ কথা বলায় যায়। সেই সমস্ত আন্দোলন গুলি, বিশেষত শিক্ষকদের আন্দোলন গুলির মোকাবিলা কিভাবে করবে প্রশাসন, এখন সেটাই দেখার। সময়ই উত্তর দেবে সে সবের।


নিয়মিত আপডেট পেতে নজর রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে -