দীপাবলিতে একদিন হয়তো ইলেকট্রিক প্রদীপ দেয়া হবে চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে!

' আর নেই গো কদর তার-ই ' 


মাটির প্রদীপ


শুভাশিস দাশ 


শৈশবের দিনগুলো বেশ মনেপড়ে দীপাবলি এলে । লক্ষ্মী পুজোর পর পরই বাজারে আসতে শুরু হতো মাটির তৈরি প্রদীপ । আমাদের প্রচলিত আরও একটি শব্দ আছে প্রদীপের তা হলো দিয়ের বা দিয়ারী । অনেকে মোলকাও বলে থাকে । এসব আঞ্চলিক শব্দ । 

সে যাই হোক সেই মাটির প্রদীপ বাড়িতে আসত দীপাবলির দুদিন আগে । অনেক প্রদীপ । সেগুলোকে মা একটি গামলায় জলে ভিজিয়ে রাখতেন । তবে ঘণ্টা তিনেক বা চারেক । 
এই মাটির প্রদীপই ছিল তখনকার দিনে দীপাবলির আলোক সজ্জার একমাত্র উত্স । 
অবশ্য মোমবাতিও ছিল তবে প্রদীপের আলো ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি । 

ক্রমে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এলো বৈদ্যুতিক আলো । টুনির মা এসে ভিড় করলো বাজারে । হারিয়ে গেলো আমাদের শৈশবের মাটির প্রদীপ । 
এখন তো বিভিন্ন রকমের আলো বাজার দখল করে রেখেছে আর আমরাও ঝামেলার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি ? 
না আছে সলতে পাকানোর ঝামেলা না আছে নিভু নিভু প্রদীপের বার বার তেল দেবার প্যাক্ণা ! 
রেডিমেড টুনির মা কে এনে ঘর আলো করাই চলছে এখন দীপাবলির রাতে । 

দুঃখটা অন্য জায়গায় । মাটির প্রদীপ যাঁরা বানাতেন এবং জীবিকার একটা বড় উত্স ছিল সেটা আজ তলানিতে ঠেকেছে । 
আমাদের কৃষ্টির অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় তার মধ্যে এই মৃৎ শিল্পীর তৈরি সামগ্রীও অন্যতম । 

আধুনিকতার সাথে অথবা এগিয়ে যাওয়া যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এটা যেমন সত্যি তেমনি পাশপাশি আমাদের ঐতিহ্যকে একেবারে হারিয়ে ফেলাও যাবে না । 

তবু দীপাবলি আসবে টুনির মা বাজার দখল করবে আর নিয়ম রাখার জন্য চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে বাতি দিতে চোদ্দ টা মাটির প্রদীপ কিনতে হবে আমাদের ! কি জানি হয়তো অদূর ভবিষৎ এ দেখবো ইলেকট্রিক প্রদীপ দেয়া হচ্ছে চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ