আনারুল ইসলাম প্রামাণিক, চ্যাংরাবান্ধাঃ  
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ঐত্যিহাসিক তিনবিঘা করিডরের গুরুত্ব প্রচুর।প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ রা ঘুরতে আসে।কিন্তু তিনবিঘা করিডোর ভ্রমণ পিপাসুদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়।আধুনিকরনের অভাবে নিরাস হওয়া ভ্রমণ পিপাসু থেকে শুরু করে স্থানীয় তাই দাবী করছে তিনবিঘা করিডর কে কেন্দ্র করে পর্যটন হাব গড়ে তোলার। উল্লেখ্য, তিনবিঘা করিডরের জন্য ভারত ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের সম্পর্ক ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে তিস্তা নদির প্রচুর জল গড়িয়েছে বাংলাদেশে।ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজনে নতুন এক ধরণের ভূখন্ডের সৃস্টি হয়েছে যা ছিটমহল নামে পরিচিত।পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হলে ছিটমহল সমস্যা টা দেখা যায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে।ছিটমহল হল সেই ভূখন্ড যা নিজ দেশের থেকে বিছিন্ন হয়ে অন্য কোন দেশের মূল ভূখন্ডে অবস্থান করে।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রচুর ছিটমহল ছিল।তবে বাংলাদেশের সব থেকে বড় দুটি ছিট দহগ্রাম ও আঙ্গারপোতা দুটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে তিনবিঘা জমি দুরুত্বে রয়েছে।এপ্রসঙ্গে বেরুবাড়ীর কথা উল্লেখ্য করতেই হচ্ছে।ভারত পাকিস্তানে বিভাজনে ছিটমহল যেমন একটি সমস্যা ছিল সেরকমেই আরেক টি সমস্যা ছিল বেরুবাড়ী।ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য র‍্যাডক্লিভ কমিশন কে দায়ীত্ব দেওয়া হয়।এই কমিশন বেরুবাড়ী এলাকা টি নির্ধারিত ভাবে দুই দেশের বাইরে রেখেছে।ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন বেরুবাড়ীর মানুষরা ভারতের পতাকা উত্তোলন করলেও পরবর্তীতে পাকিস্তান দাবী করে বেরুবাড়ী এলাকা টি।যা নিয়ে দুই দেশের রাজনীতি উত্তাল হয়েছিল।বেরুবাড়ী সমস্যা সমাধান করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুন কেও আসরে নামতে হয়েছিল।কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় অভ্যন্তরীণ কারণে।পরবর্তীতে ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হলে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বেরুবাড়ীর মানুষরা।তাদের স্বপ্ন কে পূরণ করার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি হয় ১৯৭৪ সালে।এই চুক্তি মুতাবেক বেরুবাড়ী অঞ্চল টি ভারত পায় এবং এর বিনিময়ে বাংলাদেশের বড় ছিট দহগ্রাম ও আঙ্গারপোতাকে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে একটি করিডরের মাধ্যমে সংযোগ করার জন্য তিনবিঘা জমি লিজ হিসাবে পায় যা তিনবিঘা করিডর নামে পরিচিত। যদিও তিনবিঘা করিডরের পাশ্ববর্তী মানুষরা রাজি ছিল না করিডরের পক্ষে যার জেরে ব্যাপক আন্দোলন দেখা গিয়েছে।সেই আন্দোলনে চারজন সহীদও হয়েছিল।তবে ১৯৯২ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আঞ্চলিক বাঁধা সত্বেও ভারত সরকার তিনবিঘা করিডর প্রদান করেন ৯৯ বছরের জন্য। তিনবিঘা করিডর টি প্রথম দিকে বাংলাদেশের জন্য ১২ ঘন্টা খোলা থাকলেও বর্তমানে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার সীদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সরকারেই।আর এই তিনবিঘা করিডর টি ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্কে বঝায় রাখার নিদর্শন হিসাবে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বৈঠক তিনবিঘাতে দেখা গেছে।তিনবিঘার মাটিতে যেমন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর উচ্চ আমলাদের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা রেখেছেন তেমনি ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রীয়, রাজ্য মন্ত্রী ও সেনাবাহিনী উচ্চ আধিকারিকের মত প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আডবানী ও বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ কেও তিনবিঘায় পদার্পণ করতে দেখা গেছে।

তাই গুরুত্বের দিক দিয়ে পর্যটক দের তিনবিঘার করিডরের কদর খুব রয়েছে।কিন্তু আগত পর্যটকদের তিন বিঘার পরিবেশ তেমন ভাবে আকৃষ্ট করতে পারে না।যার ফলে এলাকাবাসীর সঙ্গে তিনবিঘা দর্শনার্থীরা দাবী জানাচ্ছে তিন বিঘা করিডর কে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন হাব গড়ে তোলা।মানবেন্দ্র নাথ রায়,রেখা রায় ও সবিতা রায়ের মত দর্শনার্থীরা অভিযোগ করে জানান, ঐতিহ্যের দিক দিয়ে তিন বিঘা করিডরের সুনাম রয়েছে।আমরা দীর্ঘদিন বই ও খবরের কাগজে তিনবিঘা করিডরের কথা শুনেছি।কিন্তু এখানে সামান্য শৌচালয়ও দেখা মিললো না।তিনবিঘা করিডর লাগোয়া একটি পার্ক থাকলেও পার্কটির দোলনা,বসার চেয়ার,বাচ্চাদের খেলনার সামগ্রী সবই ভেঙ্গে বিপদজনক ভাবে রয়েছে।আমরা চাই সরকার তিনবিঘা নিয়ে ভাবুক একটু। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ সফরে আসা কনক মোহন্ত রা জানান,তিনবিঘা করিডর ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটতারের বেড়া সহ এই এলাকা টা খুবই ভালো লেগেছে কিন্তু এখানে রাত্রী বাস ও খাওয়ার কোন হোটেল বা রেষ্টুরেন্ট না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।অন্যদিকে, মেখলীগঞ্জ মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক গোলাপ প্রসাদ সাহা তিনবিঘা কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গে ভারত-পাকিস্তানের ওয়াঘা করিডরের মত তিনবিঘা করিডরকে পরিণত করার পক্ষপাতী। তিনি আরোও জানান, তিনবিঘা করিডর কে কেন্দ্র করে পর্যটন হাব গঠন হলে যেমন আগত দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে তেমনি পিছিয়ে পড়া সীমান্ত এলাকায় কর্ম সংস্থান বাড়বে।

তবে,তিনবিঘা করিডর নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানের গলায় বিষাদের সুর। বিষয় টি আমার নজরে এসেছে কিন্তু এলাকা টি কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনে থাকায় আমরা কিছু করতে পারছি না।এর সঙ্গে তিনবিঘা পার্ক নামে যে পার্ক টি রয়েছে সেটি আগের সরকার কিভাবে করেছে জানি না।কোন রেকর্ড নেই সরকারের খাতায়।যার ফলে পার্ক টির বেহাল অবস্থা থাকলেও আমাদের কিছু করার নেই। তবুও আমি ক্ষতিয়ে দেখছি কি কি করা যেতে পারে।