জাতিস্মর
সন্দীপন দত্ত

যেকোনও কঠিন কবিতার চেয়ে সত্য
একবার 'ভালবাসি' বলে কপালে চুমু আঁকা

হাতের দিকে তাকিয়ে আমি এখনও বলে দিতে পারি
তোমার বিরক্ত লাগছে আমার বাচাল স্বভাব
হ্রস্ব হয়ে আসা চোখ আমায় জানিয়ে দেয়
নদীদের ঘুম পেলে সমুদ্র বালিশ হয়ে যায়
কিংবা জানি ঠোঁট কামড়ানো মুদ্রায়
শহরের পর শহর ধংস করা যায় অনায়াস

কোমর থেকে নেমে আসা বিপজ্জনক বাঁক
হাভাতে চোখের পক্ষে ক্ষতিকর
তুমি জানো না আমি কল্পনায় সব পারি
তুমি জানো না ঘুম ভাঙলে তোমার ক্লান্ত কেন লাগে
তুমি জানো না রাত্রি আদতে আমার ষড়যন্ত্র

নগ্ন পায়ের উপর উল্কি করে করে
তৈরি হবে এক মন্দির
শতাব্দী বদলে গেলে একদল অভিযাত্রী
হঠাৎ খুঁজে পাবে সেই শিল্প
যেভাবে তোমায় আবিষ্কার করেছি
বারবার অক্লান্ত এক পথিক আমি
তোমার ভেতরে ঢুকে হারিয়ে গিয়েছি গজদন্তাঘাতে
হারিয়ে গিয়েছি খোলা কোনও মন্ত্রপূত চুলের ঢাল

তারপর এক অস্থির সাম্যে নিজেকে যতবার
তুলে ধরতে চেয়েছি ননীর পাহাড়
আমায় আঁচলের মতো নামিয়ে এনেছে
আমায় কাজলের মতো গলিয়ে এনেছে

আমায় তোমার প্রেমিকের মতো কেউ ভেবে
আচমকা বসন্ত এসেছিল শীতে
করোনেশন সেতু থেকে একটা জ্বলন্ত সিগারেট
তিস্তায় আগুন লাগিয়ে ধুন্ধুমার
তুমি তবু চোখ তোলোনি
আর বেঁচে গেছে আমার শহর

এদিকে তোমার প্রেমিকেরা তোমার ভেতর
প্রবেশ চেয়ে মানত করেছে আমার ইষ্টদেবতার কাছে
আজকাল আমাদের মেহফিল জমে
আমি ও ঈশ্বর ধূমপান করি গুলমার জঙ্গলে বসে
খুঁজতে খুঁজতে তোমার নাদান প্রেমিকদল
চলে আসে বসে আর প্রসাদ ভিক্ষা চায়
দেবতা আমার দিকে চেয়ে হাসলে সবার চোখ
ঘুরে যায় আমার খোলা বুকের দিকে
একটা অরণ্য একটা মরশুমি নদী
কিছু পাথর বুকে নিয়ে আমি কবীর সুমন গেয়ে উঠি

"যতবার তুমি জননী হয়েছ
ততবার আমি পিতা..."

হায় প্রেম হায় শিক্ষানবিশ
কেউ জানল না এক একটা সভ্যতা তৈরিতে কতটা
জীবন গেছে আমাদের
তোমার সেজে ওঠা আমার অর্ঘ্য
তারপর ছাইপাশ মানুষের ভীড় আর
বদলে বদলে যাওয়া মাপকাঠি

অথচ কবিতা লেখার চেয়ে
'ভালবাসি' বলাটা সহজ ছিল জানো?