পশ্চিমবঙগে প্রায় ১লক্ষ ৮৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রায় এক দশক ধরে চূড়ান্ত অসম্মান ও বেতন বৈষ্যমের শিকার হয়ে দিনগুজরান করে আসছেন। অথচ রাজ্যের নানা প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এই ঘটনায় নীরবতা পালন করছিলেন এবং বলা বাহুল্য নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই UUPTWA নামক একটি সদ্য গড়ে ওঠা প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন।নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও টানা ২ বছর ধরে তারা নানা রকম আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন।প্রাথমিক ভাবে শিক্ষা দপ্তরের সমস্ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের ঘরে কড়া নেড়ে নেড়ে সরকারের দৃষ্টি আকষর্নে তাদের ব্যার্থ হতে হয়। কোন আশানুরুপ ফল না পেয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য তারা হয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তারা কোন ভাবে সরকারের কাছ থেকে বেতন বৈষম্যে মিটবার আশা পাননি। উপরন্ত আন্দোলনকারী বিভিন্ন জেলার ১৪ জন শিক্ষক- শিক্ষকাকে শাস্তি হিসাবে দুরবর্তী জায়গায় বদলী করা হয়।কোন বেতন বৈষম্যের অবসান তো হল না পরন্ত এই শাস্তি মূলক বদলী এবং আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষকদের জামার কলার ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া,পায়ের বুট দিয়ে পেটে লাথি মারা, লাঠি নিয়ে প্রচন্ড মারা,জল কামান দিয়ে আহত করা বা টানতে টানতে লালবাজারে জেলে নিয়ে যাওয়া সব ঘটনাই আগুনে ঘৃতাহুতি ঘটায়। ফলে এই প্রতিহিংসা মূলক আচরণের বিরুদ্ধে শেষ অস্ত্র হিসাবে UUPTWA আমরণ অনশনের কমর্সূচী গ্রহণ করতে বাধ্য হন।গত ১২ ই জুলাই বিকাশ ভবনের অদুরে উন্নয়ন ভবনের পাশে ওয়াই চ্যানেলে অবস্থান শুরু হয় এবং সরকারের কাছ থেকে কোন বার্তা না পেয়ে ঠিক তার পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৩ই জুলাই থেকে টানা ১৪ দিন অনশন করার পর সরকার বাধ্য হন বেতন কাঠামো পরিবর্তন করার একটি নোটিশ জারী করতে।নোটিফিকেশন No.510-SE/P/10M -06/09(PT-1).TET,dated-26.07.19 অনুযায়ী ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষকদের পে ব্যান্ড -২ এর গ্রেডপে ২৬০০ টাকা থেকে পে ব্যান্ড-৩ এর গ্রেডপে ৩৬০০ টাকা তে পরিবর্তন এবং ননট্রেন্ড দের পে ব্যান্ড-২ এর গ্রেড পে ২৩০০ টাকা থেকে একই পে ব্যান্ডের গ্রেড পে ২৯০০ টাকা তে পরিবর্তনের নোটিশ দেওয়া হয় যেটা ১ লা আগস্ট,২০১৯ থেকে কার্যকরী হওয়ার কথা।
কিন্তু এই নোটিশটি শিক্ষকদের কাছে চুড়ান্ত অস্পষ্ট  ও হতাশাজনক বলে মনে হয়েছে।তাই বিগত মাসেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ও প্রতিটি জেলার ডি.আই ও জেলা সংসদ সভাপতির কাছে ডেপুটেশন দেবার ব্যবস্থা করেন ও বেতন সংক্রান্ত নোটিশটির বিভিন্ন বৈষম্যের দিক গুলি জানতে চান UUPTWA রাজ্য ও বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব ।এরপরই কদিন আগে সরকার সেই সংক্রান্ত একটি ক্লারিফিকেশন নোটিশ উপস্থাপন করেন।
UUPTWA এর পক্ষ থেকে এই নোটিশটির ব্যাপারে নানা জ্ঞানী গুনী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক,সংশ্লিষ্ট  দপ্তরে আগে কাজ মানুষ,আইনজ্ঞ এমনকি পূর্বতম অর্থমন্ত্রী সঙগে সৌজনমূলক সাক্ষাত করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নোটিশটি বা ক্লারিফিকেশনের প্রচুর ভুলত্রুটি বিকাশ ভবনের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরের অাধিকারিকদের জানান।তবে এ ব্যাপারে কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেননি বরং এই নোটিশটি নিয়ে অর্থ দপ্তর ও শিক্ষা দপ্তর একে অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে এই প্রবণতা তারা লক্ষ্য করেন।
আজ UUPTWA এর পক্ষ থেকে প্রেস ক্লাবে উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়াকে এই সরকারী নোটিশ এবং ক্লারিফিকেশন সম্পর্কে নেওয়া সরকারী বেশ কিছু ভুলত্রুটি তুলে ধরেন।এই নোটিশ তাদের কোন রকম বেতন বৈষম্যের অবসান করবে না বরং সেটা বাড়াবে বলে দাবী করেন।তাদের বক্তব্য  সরকার যদি বেতন কাঠামো পরিবর্তনের কথা বলেন তাহলে গ্রেড পে এর সঙগে পে ব্যান্ড ফিটমেন্ট দিয়ে পরিবর্তন করাটাই নায্য কারণ নোটিসে পে ব্যান্ড ২ থেকে পে ব্যান্ড ৩ এ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা আছে।তাছাড়া এটা নাহলে সিনিয়র শিক্ষক দের সঙে জুনিয়ার শিক্ষকদের বেতন একই বা কাছাকাছি হয়ে যাবে যেটা কোন মতেই সঠিক নয়।তাদের দাবী মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বারবারই বেতন বৈষম্যের কথা স্বীকার করে বৈষম্যে ঘোচানোর কথা বলে এসেছেন এমনকি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন আর মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতনে সমতা নিয়ে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। UUPTWA নেতৃত্ব প্রথম থেকেই সর্বভারতীয় বেতন বা PRT স্কেলের বেতন বা PB-4 (Rs.9300-34800 এবং গ্রেড পে Rs.4200) এর দাবী করে আসছিলেন।
কিন্তু নেতৃত্ব মাননীয় মন্ত্রীর সঙগে বার বার দেখা করার পর তার কাছ থেকে রাজ্যের আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনে এসেছেন।তাই তাদের বর্তমান বেতন PB-2( Rs.5400-25200 ও গ্রেডপে 2600) থেকে সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন PB-4 না দিক অন্তত PB-3(Rs.7100-37600 ও গ্রেড পে 3200)এর বেতন দেবেন এটাই সবমহল ধরে নিয়েছিল।বিভিন্ন পেপারে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা বাড়ানোর কথা ফলাও করে ছাপানো হল।এব্যাপারে ১১৭০ কোটি টাকা খরচ হবার কথাও শোনা গেল।কিন্ত সব জল্পনাকল্পনার অবসানে যেটা হতে চলেছে সেটা কেবল একটি গ্রেড পে আর কেবল নতুন শিক্ষকদের পে ব্যান্ড পরিবর্তিত হয়ে ৭৪৪০ টাকা সংগে গ্রেড পে ৩৬০০ টাকা বাড়ানোর আশ্বাস। আর সিনিয়র শিক্ষকদের ও নতুন যোগদানকারী ননট্রেন্ড শিক্ষক দের কেবল গ্রেড বাড়ল। এটা যে চুড়ান্ত অসম্মানজনক ও বৈষম্যের নিদর্শন হতে চলেছে পশ্চিম বঙগের প্রাথমিক সমাজে তা বলাই বাহুল্য।তাই সরকার জুনিয়র এবং সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্যের অবসান না করে অপসান এবং ফিক্সেসান করেন তাহলে আগামীদিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নিজেদের সঁপে দেবে এই হুঁশিয়ারি সরকারের দিকে ছুড়ে দিলেন UUPTWA এর অকুতভয় রাজ্য নেতৃত্ব । আর সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে থেকে এই বঞ্চনার শেষ দেখে ছাড়বেন-এই আশ্বাসও দেন আজকের বৈঠকে।