সংবাদ একলব্য, ৭ আগস্টঃ কোচবিহারের ছেলে রাশেদ। জন্ম ৩০শে অক্টোবর ১৯৯৬ সালে। ছোটবেলা থেকেই বেশিরভাগ সময়টা কেটেছে টাপুরহাট এলাকায় তার দিদির বাড়িতে। পড়াশুনা সারদা শিশু তীর্থ ও কোচবিহার নৃপেন্দ্র নারায়ন হাই স্কুলে এবং এরপর রাশেদ মেডিক্যাল ও টেকনোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছে। বর্তমানে সে পড়াশুনা যতটুকু সম্ভব সম্পন্ন করে অভিনয় জগতটাকেই আপন করে নিয়েছে এবং এই অভিনয় জগতে ধীরে ধীরে সফলাতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই সফলতার পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে বহু কষ্ট, বহু দুঃখ এবং হার না মানার মতো বহু পারিশ্রমিক। 
কিন্তু কি সেই যন্ত্রণা তার জীবনের আড়ালে, সকলের মনে এই  প্রশ্ন থেকেই যায়। আর এই সমস্ত তথ্যই আমরা নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য।  
কখনো কারো কথায় কেঁদেছেন?
তার উত্তরে আসলে অভিনেতাদের জীবনও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো হয়ে থাকে হাসি কান্না মিশিয়ে তাদের জীবন আসলে আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষই নিজস্ব জীবনে অভিনেতা কেউ ক্যামেরার সামনে কেউ ক্যামেরার বাইরে আর একটা কথা তো আমি খুবই বিশ্বাস করি "হিরোর চোখের জল দর্শক চায়না"
সিনেমা, অভিনয়, পর্দার সামনে নিজেকে উপস্থাপন সকলি যেন একটা স্বপ্নের বিষয়। আর এই স্বপ্ন খুব ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছিল এই উদীয়মান সিনেস্টার। বিভিন্ন প্রকার নাটক, থিয়েটারেও খুব ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করত রাশেদ। আর এইভাবেই এগোতে এগোতে সর্বেন্দু শেখর দত্তের পরিচালিত একটি গান "আমার ভালো লাগেনা" এর মাধ্যমে তার অভিষেক ছোট পর্দায়। এভাবেই গান, স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা মিলিয়ে প্রায় ৫০টির কাছাকাছি চরিত্রে অভিনয় করে রাশেদ। এবং প্রত্যেকটি চরিত্রেই সে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অভিনয় করে। এর পরেই রাশেদের সুযোগ মেলে বড় পর্দায় সত্যজিৎ দাসের "পেইন্টিংস ইন দা ডার্ক" সিনেমাতে যার মুখ্য অভিনেতা হলেন রাশেদ। বড় পর্দায় এটিই তার প্রথম সিনেমা । সিনেমাটি দর্শকের সামনে এসেছে কিন্তু তা নির্দিষ্ট সংখ্যক অর্থাৎ ফেস্টিভাল স্ক্রীনিং হচ্ছে কিন্তু খুব শিগগিরই জনসাধারণের জন্য সে ছবিটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে আসতে চলেছে। 


রাশেদের মতে পছন্দের চরিত্র ও অভিনয় নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা- রাশেদ মনে করে "ছবি হল সমাজের দর্পণ আর অভিনেতারা সেই দর্পণ কে ঘষেমেজে উজ্জ্বল করে" আর তাই যে ধরনের চরিত্রগুলি একটু বাস্তব মুখী সেই ধরনের চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে ভালো লাগে তার এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা হল সে ভালো ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে চায় যদিও এখনও পর্যন্ত যতগুলো চরিত্রে অভিনয় করেছে সবই নাকি প্রধান চরিত্র বলে সে জানায়। কিন্তু চরিত্র ভালো হলে সেটা প্রধান হোক বা পার্শ্বচরিত্র তাতে তার কোন অসুবিধে নেই তাই রাশেদ এটাই বলতে চায় ভবিষ্যতে সে ভালো ভালো ছবিতে কাজ করতে চায়, আর সেটা প্রধান চরিত্র হোক আর পার্শ্ব চরিত্র যাই হোক না কেন সকল চরিত্রকেই সে সমান ভাবে নিতে চায়। 
অভিনয় জগতে পরিবার থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষ এবং বন্ধু বান্ধবরা রাশেদকে কতটা উৎসাহিত করেছে- তার কথায় 'আমরা যেখান থেকে গিয়ে অভিনয় করার কথাটা ভাবি সেখানকার পরিবারে প্রথমে তো এই পেশা কে নিয়ে একটা অনিশ্চয়তার চিন্তা থাকে সেটা তারও ছিল কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে আর বন্ধুরা সাহায্য করবে না বা উৎসাহ দেবে না এমন তো হয় না তারা বরাবরই দিয়েছে কেউ কেউ হয়তো দেয়নি আর গ্রামের লোকের ভালোবাসা অবশ্যই পেয়েছি কারণ আমার এখনো মনে আছে একটা জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা যখন আমাকে নিয়ে খবর করেছিল তখন সকালে এসে গ্রামের লোকই প্রথম বাড়িতে খবরটা দেয় তাই তাদের ভালোবাসা তো অবশ্যই আমার সঙ্গে আছে।'
অনেকেই তো বলে একজন সফল পুরুষের পিছনে কোননা কোন একজন নারীর হাত তাহলে কি তার ক্ষেত্রেও কি তাই? - তার কথায় 'সফল পুরুষের পেছনে নারী থাকা প্রয়োজন কিনা জানিনা তবে কেউ তো একজন অবশ্যই আছে আর যদি নিতান্তই কোন নারীর কথা বলতে হয় তবে তো মায়ের থেকে বেশি কেউ করতে পারবে না।'
অভিনয় জগৎ থেকে তার প্রাপ্তি পূরস্কার- এ বছর মোট আট টা পুরস্কার পেয়েছে তার মধ্যে প্রথম পুরস্কার টা এসেছে আসাম থেকে উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা হিসেবে।
রাশেদের অভিনিত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের কাজ শুরু হয়েছে এবং সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশেরও দুটো কাজ। আগামী ১৫ই আগস্ট "এক ফোটা পানি" নামের একটি ছবি রিলিজ করতে চলেছে।




আর এই সব পর্যায়ে পৌঁছাতে রাশেদ কে কোন কোন বিশেষ মুহুর্ত পার করতে হয়েছে?- রাশেদের কথায় কোন কিছু পেতে গেলে যে কষ্ট করতে হয় সেটা স্বাভাবিক হয়তো এখন আমাকে দেখে অনেকই কি ভাবছেন রাশেদ হয়তো এই সুযোগটা খুব সহজে পেয়েছে কিন্তু এর পিছনে লুকিয়ে আছে প্রায় 5 বছরের পরিশ্রম আমাকে এমন কথা অনেকবার শুনতে হয়েছে আমার কথাবার্তার ধরনে উত্তরবঙ্গের ছোঁয়া আছে তাই আমাকে কলকাতায় কাজে নেওয়া যাবে না এমন অনেক বার হয়েছে যে ডিরেক্টরের নিজের অফিসে আমাকে ডেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন শুধুমাত্র এতোটুকু বলার জন্য যে আমরা একটা প্ল্যান করছি সেখানে তোমাকে ভাবছি হয়তো সে কাজগুলো এখনো হয়নি কিন্তু তাদের এভাবে হারাসমেন্ট করতে ভালো লাগত বলে দিনের পর দিন ডেকে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করাতো আমায়। অবশ্য আমি এসব কে সময় নষ্ট করা ভাবি না কারণ সেই দিনগুলো না থাকলে আজকের এই দিনটা আসতো না এভাবে বিভিন্ন প্রত্যাখ্যান শোনার পরে ধীরে ধীরে কাজ আসতে শুরু করে এবং আমি কাজ করা শুরু করি। 
Copyright লেখাটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা- আছির আলী ও রাশেদ রহমান  এর মধ্যে।