'বন্দেমাতরম' নিয়ে লোকসভায় বক্তৃতায় বারেবারে হোঁচট খেলেন প্রধানমন্ত্রী! কখনো ‘বঙ্কিমদা’, কখনো বিহার হল বিকাশ!
লোকসভায় বন্দে মাতরম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তৃতা রাখলেন আজ। আর সেই বক্তৃতা জুড়ে বড় অংশ রইল বাংলা। বন্দে মাতরমের গুরুত্ব এবং প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে ইতিহাস স্মরণ করালেন নরেন্দ্র মোদী। আর খেলেন হোঁচটও। একাধিক বার হোঁচট খেতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। কখনও বন্দে মাতরমের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করলেন তিনি। কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামী পুলিনবিহারী দাসকে ভুলক্রমে ‘পুলিনবিকাশ দাস’ বললেন প্রধানমন্ত্রী। কখনও আবার তাঁর ভ্রান্তিবিলাসে যুক্ত হল ‘মাস্টার সূর্য সেন’।
এদিন লোকসভায় প্রায় এক ঘন্টা বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর তাতে কয়েকবার হোঁচট খেলেন। বক্তৃতার ২৩ মিনিট সময়ে বিরোধী আসন থেকে 'বঙ্কিমচন্দ্র'কে প্রধানমন্ত্রীর 'বঙ্কিমদা' বলা নিয়ে প্রতিবাদ জানান দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধনে আপত্তি জানিয়ে সৌগত বলেন, অন্তত ‘বাবু’ বলুন। বক্তৃতা থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী সৌগতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আচ্ছা, বাবু বলছি।”
বাঙালি তরুণদের আত্মবলিদানের ইতিহাস স্মরণ করানোর সময় মোদীর মুখে পুলিনবিহারী নয়, শোনা যায় ‘পুলিনবিকাশ’-এর কথা। এ খানেই শেষ নয়, তার পরেই সূর্য সেনের বীরত্বের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তাঁকে মাস্টারদা-র পরিবর্তে ‘মাস্টার’ বলে সম্বোধন করে বসেন প্রধানমন্ত্রী। সৌগতের আপত্তিতে ‘দাদা’ সম্বোধন নিয়ে সাবধানি হয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী সাবধানতার সঙ্গেই ‘মাস্টারদা’-র ‘দা’ বাদ দিয়েছেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন প্রধানমন্ত্রী সচেতন ভাবেই করেছেন, না কি ভুলক্রমে তা হয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কারণ বেশ কয়েক বার তাঁর মুখে এই সম্বোধন শোনা গিয়েছে।
বন্দে মাতরম নিয়ে নিজের অভিমতের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলার গলি থেকে বেরোনো এই আওয়াজ গোটা দেশের আওয়াজ হয়ে উঠেছিল।” বঙ্গভঙ্গের প্রসঙ্গও উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ব্রিটিশরা বুঝে গিয়েছিল, ভারতকে টুকরো না-করলে শাসন করা মুশকিল। ওরা ওদের বিভেদ ও শাসননীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিল বাংলায়, বঙ্গভঙ্গ করে। কারণ ব্রিটিশরা জানত বাংলার বৌদ্ধিক শক্তি দেশকে দিশা, প্রেরণা আর শক্তি জোগাচ্ছে।” বঙ্গভঙ্গ করে ব্রিটিশ শক্তি ভারত ভাগের বীজ পুঁতেছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষুদিরাম বসু, রামপ্রসাদ বিসমিল, মদনলাল ধিংড়ার প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও উদ্ধৃত করেন তিনি বলেন, “গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, “একই সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন, এক কার্যে সঁপিয়াছি সহস্র জীবন— বন্দে মাতরম।” বন্দে মাতরম কী ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার তরুণদের উদ্দীপিত করেছিল সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে বন্দে মাতরম স্লোগান তুলত। বলত, “যায় যাবে জীবন চলে, জগৎমাঝে তোমার কাজে বন্দে মাতরম বলে।” ফাঁসির আগে বন্ধুকে লেখা চিঠিতেও সূর্য সেন বন্দে মাতরম মন্ত্র উল্লেখ করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সামনে বাংলার বিধানসভা নির্বাচন আর তার আগে লোকসভায় বন্দেমাতরম নিয়ে আলোচনা অনেকটা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনায় মোদীর বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে তা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে বার বার হোঁচট খেয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সরগরম রাজনীতি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊