পৌষ পুত্রদা একাদশী এবং তার মাহাত্ম্য
-ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মুখর এই একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য বর্ণনায়। পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের এই একাদশীই পৌষ পুত্রদা একাদশী।
এই পৌষ পুত্রদা একাদশী পালিত হয় মূলত সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষায় এবং সন্তানের মঙ্গলের কামনায়। বাস্তবে, এই একাদশী পুত্র প্রদান করেন বলেই এই একাদশীকে বলা হয় পুত্রদা একাদশী।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নিঃসন্তান দম্পতিরা যদি নিষ্ঠার সাথে এই ব্রত পালন করেন - তবে তাঁদের সুসন্তান লাভ হয়। সেই সাথে তাঁরা ভগবান নারায়ণের আশীর্বাদে বিদ্বান এবং যশস্বী হয়ে উঠেন, পূর্বজন্মের পাপ থেকে মুক্তি পান এবং মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ করেন।
এই একাদশীর অধিষ্ঠাতা দেবতা হলেন চক্রধারী নারায়ণ। এই একাদশীতে ভগবান বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মীর পূজার প্রচলন আছে। বলা হয় - এই আরাধনার মাধ্যমে পরিবারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আসে। এদিন বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ এবং দান-ধ্যানের রীতিও বহুল প্রচলিত।
পুরাণ অনুসারে, ভদ্রাবতী পুরীর রাজা সুকেতুমান এবং তাঁর রানী শৈব্যা নিঃসন্তান হওয়ার কারণে অত্যন্ত দুঃখিত ছিলেন। তাঁরা প্রতিটি মুহূর্তে চিন্তিত থাকতেন তাঁদের মৃত্যু পরবর্তীকালীন সময়ে পিণ্ডদান কে করবেন - সে বিষয়ে। একদিন রাজা মনের দুঃখে বনে চলে যান এবং সেখানে একটি সরোবরের তীরে ঋষিদের আশ্রম দেখতে পান।
সেই সরোবরে 'বিশ্বদেব' ঋষিরা উপস্থিত ছিলেন। রাজা তাঁদের কাছে নিজের দুঃখের কথা জানালে ঋষিরা তাঁকে পৌষ পুত্রদা একাদশী ব্রত পালনের পরামর্শ দেন। ঋষিদের উপদেশ অনুযায়ী রাজা নিষ্ঠাভরে ফলমূলাদি আহার করে এই ব্রত পালন করেন এবং দ্বাদশীতে যথাবিধি পারণও পালন করেন। পরবর্তীতে এই ব্রতপ্রভাবে তিনি এক তেজস্বী পুত্র সন্তানের পিতা হন। প্রচলিত বিশ্বাস - সেই থেকেই এই ব্রত পালিত হয়ে আসছে।
শাস্ত্রে এই ব্রতকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্রত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে - এই ব্রত পালনে যে শুধু পুত নামক নরক থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তাই নয়, এই ব্রত কথা শ্রবণ এবং কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊