স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নৃশংস খুন: কাঠগড়ায় রাজগঞ্জের 'দাবাং' বিডিও
নিজস্ব প্রতিবেদন, নিউটাউন, জলপাইগুড়ি:
নিউটাউনের যাত্রাগাছিতে খালধার থেকে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এবার চরম চাঞ্চল্যকর মোড়। অপহরণ ও খুনের অভিযোগ সরাসরি উঠল জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (BDO) প্রশান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে। মৃত ব্যবসায়ীর নাম স্বপন কামিল্যা (৪৩), যাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরে হলেও তিনি সল্টলেকের দত্তাবাদে সোনার ব্যবসা করতেন।
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার সূত্রপাত হয় আরও কয়েক মাস আগে। গত অগাস্ট মাসে রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণের বাড়ি থেকে কিছু সোনার গয়না চুরি যায়। পরবর্তীতে বাড়ির কেয়ারটেকারের মাধ্যমে বিডিও জানতে পারেন, চুরি যাওয়া সেই সোনা স্বপন কামিল্যার দত্তাবাদের দোকানে বিক্রি করা হয়েছে।
এর পরই, স্বপন কামিল্যার পরিবার অভিযোগ করেছে, বিডিও প্রশান্ত বর্মণ পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থানার দিলমাটিয়া গ্রামে স্বপনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে 'শেষ করে দেওয়ার' হুমকি দেন। এই হুমকির একটি ভিডিও মোহনপুর থানার হাতে তুলে দিয়েছে স্বপনের পরিবার। পরে অবশ্য স্বপন কামিল্যা বিডিও-কে সোনার গয়না ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
৩১ অক্টোবর বিধাননগর দক্ষিণ থানায় দায়ের করা অভিযোগপত্রে মৃতের শ্যালক দেবাশিস কামিল্যা জানিয়েছেন, গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে প্রশান্ত বর্মণ আরও ৫-৬ জন লোক নিয়ে দত্তাবাদের সোনার দোকানে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি সাদা এবং একটি নীল বাতি লাগানো কালো রঙের গাড়ি।
অভিযোগ, বিডিও ও তাঁর দলবল স্বপন কামিল্যা এবং তাঁর বাড়ির মালিক গোবিন্দ বাগকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিউটাউনের দিকে নিয়ে যান। কিছুদূর যাওয়ার পর বাড়ির মালিককে ছেড়ে দেওয়া হলেও স্বপন কামিল্যাকে তাঁরা নিয়ে চলে যান।
এর পরদিনই, ২৮ অক্টোবর, নিউটাউনের যাত্রাগাছি বাগজোলা খালপাড়ের ঝোপের মধ্যে থেকে স্বপন কামিল্যার রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা জানা যায়।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে গত ৩১ অক্টোবর বিধাননগর দক্ষিণ থানায় স্বপনের শ্যালক দেবাশিস কামিল্যা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে অপহরণ করে খুন ও তথ্য প্রমাণ লোপাট (IPC-র একাধিক ধারা) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, অপহরণের সময় প্রশান্ত ও তাঁর দলবল দোকান থেকে সোনার জিনিস এবং সিসিটিভি ফুটেজও নিয়ে যান।
একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠায় রাজগঞ্জের প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। অভিযুক্ত রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই বিষয়ে সিপিএম এবং বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি ঘটনার যথাযথ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দক্ষিণ বিধাননগর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊